Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

সরকারের ত্রাণ ফিরিয়ে দিলেন সাঁওতালরা উচ্ছেদকৃত: জমিতেই পুনর্বাসন ও জড়িতদের শাস্তির দাবি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি    |   
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০:০০ | অাপডেট: ১৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০১:৪৩:৫৫ 
[  গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সোমবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাদারপুর গ্রামে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া হয়। তবে উচ্ছেদের প্রতিবাদে তা প্রত্যাখ্যান করেন সাঁওতালরা -যুগান্তর ] 

জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় প্রশাসনের ত্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছেন সাঁওতালরা। সহিংস হামলার শিকার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে সোমবার সকালে মাদারপুর মিশন গির্জা এলাকায় হাজির হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হান্নান। ত্রাণ বিতরণ করা হবে এমন খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও দরিদ্র সাঁওতাল পরিবারগুলো এগিয়ে যায়। কিন্তু এটি প্রশাসনের ত্রাণ হওয়ায় সেগুলো গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তারা সবাই বাড়িতে ফিরে যান। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের বক্তব্য, যারা আমাদের গুলি করে হত্যা করেছে, বাড়িতে আগুন দিয়েছে, বাপ-দাদার জমি থেকে উচ্ছেদ করেছে, মামলা দিয়েছে তাদের দেয়া ত্রাণসামগ্রী তারা গ্রহণ করবেন না। উচ্ছেদকৃত জমিতেই তারা পুনর্বাসন ও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান।

ইউএনও মো. আবদুল হান্নান জানান, জেলা প্রশাসনের বরাদ্দকৃত ত্রাণসামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০ জন পরিবারের মধ্যে বিতরণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এতে প্রত্যেক পরিবারের জন্য ২০ কেজি চাল, ১ লিটার সয়াবিন, ১ কেজি আলু, আধা কেজি মসুর ডাল, আধা কেজি লবণ এবং দুটি করে কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা গ্রহণ না করায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ত্রাণসামগ্রীগুলো ফিরিয়ে আনতে হয়।

সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার কমিটির সহসভাপতি ফিলিমন বাসকে বলেন, কাঁটা তার দিয়ে আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি থেকে যখন বঞ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, নিহতদের ক্ষতিপূরণের যখন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, আগুন এবং লুটপাটের ফলে যে ব্যাপক ক্ষতি হয় তা পূরণের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সে ক্ষেত্রে সামান্য খাদ্য দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা তাই প্রশাসনের ওই ত্রাণসামগ্রী প্রত্যাখ্যান করেছেন।

মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (প্রশাসন) ইসরাত হোসেন খান সোমবার ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল পল্লী জয়পুর ও মাদারপুর পরিদর্শন করেন। তিনি তাদের খোঁজখবর নেন। তাদের ওপর নির্যাতন এবং সমস্যার বিষয়গুলো বিভিন্ন মহলে তুলে ধরার আশ্বাস দেন।

সোমবার দুপুরে রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন গোবিন্দগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাঁওতালদের ওপর হামলা, বাড়িঘরে আগুন, লুটপাট, গুলি করে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন প্রধান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ৬ নভেম্বর সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে কাঁটা মোড়ে রংপুর চিনিকলের পক্ষ থেকে আখ বীজ কাটতে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এগিয়ে গেলে ১০ পুলিশ সদস্য তীরবিদ্ধ হওয়াসহ ৩০ জন আহত হয়। এরপর সন্ধ্যায় যৌথ বাহিনী অভিযান শেষে ফিরে আসার পর স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনতা সাঁওতালদের দখলকৃত জায়গায় গড়ে তোলা ঘরগুলোতে আগুন দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রংপুর চিনিকল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল আউয়াল, চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল প্রমুখ।

সৌহার্দ সমাবেশ : সোমবার বিকালে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার সংলগ্ন কাঁটা মোড়ে সাপমারা ও কাটাবাড়ি ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে স্থানীয় সাঁওতাল-বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক শীর্ষক এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কাটাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রফিকের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন গোবিন্দগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন ফকু, মহিমাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ প্রধান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া ইসলাম জুয়েল, দরবস্ত ইউপি চেয়ারম্যান আ র ম শরিফুল ইসলাম জজ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শৈলেন্দ্র মোহন রায়, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সেক্রেটারি তনয় কুমার দেব, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেতা গৌড় মাল পাহাড়ী, রশেন কিসকু, চরণ মুরমু, সাপমারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম রেজা মন্টু, যুবলীগ নেতা মিনহাজুল ইসলাম প্রমুখ।

সমাবেশের ব্যাপারে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী প্রধান মোবাইল ফোনে বলেন, ভূমি উদ্ধার আন্দোলনে এখনও যিনি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে চিহ্নিত, তিনি সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল। তিনিই আন্দোলনের বিরোধিতা করে সাঁওতালদের উচ্ছেদ ও লুটপাটে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, সোমবার কাঁটা মোড়ে যারা সম্প্র্রীতি সমাবেশের আয়োজন করেন তারাই গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন সাঁওতাল পল্লী থেকে দরিদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকদের ভাড়া করে এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে সমাবেশে আসতে বাধ্য করেন।

গুলিবর্ষণের নেপথ্যে : গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের ওপর গুলির নির্দেশ কারা দিয়েছিলেন তা জানতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে বারবার প্রশ্ন করেও উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে সোমবার সকালে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার এ ব্যাপারে জানান, সেদিন ৫ ম্যাজিস্ট্রেটকে আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তাদের নির্দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি করা হয়। ওই পাঁচজন হলেনÑ গোবিন্দগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হান্নান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহমেদ আলী, পলাশবাড়ি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম, জেলা কালেক্টরেটের ম্যাজিস্ট্রেট রাফিউল ইসলাম ও মেজবাহ উদ্দিন। গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও আবদুল হান্নান বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

আহতদের দেখতে হাসপাতালে আ’লীগ নেতারা : রংপুর ব্যুরো জানায়, গোবিন্দগঞ্জে আহত সাঁওতালদের রোববার রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে দেখতে আসেন আওয়ামী লীগ নেতারা। নেতাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য টিপু মুনশি, রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম মোজাম্মেল হক এবং জেলা ও মহানগর নেতারা। হাসপাপতালে চিকিৎসাধীন আহত সাঁওতালরা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ওইদিনের সহিংস ঘটনার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যকে দায়ী করেন।

পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত দ্বিজেন টুডোকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক শম্পা জানিয়েছেন। তিনি জানান, দ্বিজেন টুডোর চোখের উপরের অংশে গুলি লেগেছে।
http://www.jugantor.com/last-page/2016/11/15/76790/%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A3-%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%93%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%B0%E0%A6%BE 
Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment