নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা ॥ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার
সাঁওতাল পল্লী পরিদর্শনকালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী
রিয়াজুল হক বলেছেন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সম্পত্তি রক্ষা করার অধিকার
রয়েছে সাঁওতালদের। তারাও এদেশের নাগরিক। তাদের উপর হামলা, ঘরবাড়ি আগুন
দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া, সহায় সম্পদ, লুটপাট, গুলি করে তাদের হত্যার যে ঘটনা
ঘটেছে তা ন্যাক্কারজনক ও মানবাধিকার লংঘন। এ হামলার ঘটনাকে মেনে নেয়া যায়
না। সাঁওতাল পল্লী পরিদর্শন কালে মাদারপুর গির্জার সামনে অনুষ্ঠিত এক
সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সোমবার গোবিন্দগঞ্জের
জয়পুর ও মাদারপুর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উপস্থিত সাঁওতাল ও সাংবাদিকদের
উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘সাঁওতালদের অধিগ্রহণ করা জমি
চিনিকল কর্তৃপক্ষ শর্ত ভঙ্গ করে অনেকের নামে লিজ দিয়েছেন। যদি লিজও দিতে
হয় তা পাওয়ার অধিকার সাঁওতালদেরও রয়েছে। কিন্তু তাদেরকে তা দেয়া হয়নি কেন?।
সাঁওতালদের উপর হামলা ও উচ্ছেদের ঘটনায় সরেজমিন তদন্ত করে আমলামত সংগ্রহ
করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন সরকার ও সংসদীয় আদিবাসীদের
ককাসের কাছে তা উপস্থাপন করা হবে।
তিনি
সাঁওতালদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাপ-দাদার জমি থেকে আপনাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এখন আপনারা সকলে জীবন ও জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। এখনো জীবন
রক্ষার্থে আপনারা তীর-ধনুক ও লাঠি হাতে পাহাড়া দিচ্ছেন। তবে আপনারা আইন
নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে, একটি ঘটনা ঘটিয়েছে
আপনাদের উচ্ছেদ করেছে তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির
ব্যবস্থা করা উচিৎ।
প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সাঁওতালরা আর যাতে কোন হামলা এবং ভয়ভীতি বা হয়রানীর শিকার না হয় তা দেখার দায়িত্ব আপনাদের।
সকাল
সাড়ে ৯টায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, আধিবাসী বিষয়ক সংসদীয় কমিটির ককাস
কমিটি ও ইউএনডিপি’র ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল ক্ষতিগ্রস্থ মাদারপুর ও
জয়পুর সাঁওতাল পল্লী ঘুরে দেখেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ সাঁওতালদের খোঁজ খবর নেন।
সমাবেশ শেষে মাদারপুর গির্জার ভেতরে
ক্ষতিগ্রস্ত ৫ পুরুষ ও ৫ নারী সাঁওতালের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা ও তাদের
সাক্ষ্য গ্রহণ করেন প্রতিনিধি দলটি। পরে প্রতিনিধি দলটি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা
প্রশাসনের সাথে দেখা করেন। ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন জাতীয়
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, পরিচালক (তদন্ত ও অভিযোগ)
শরিফ উদ্দিন, উপ-পরিচালক মো. আশিক, আধিবাসী বিষয়ক সংসদীয় কমিটির ককাস
কমিটির আহ্বায়ক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, সংসদ সদস্য টিপু সুলতান,
অধ্যাপক মেজবাহ কালাম, একেএম ফজলুল হক ও ইউএনডিপি’র চীফ টেকনিশিয়ান শর্মিলা
রাসুল, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর তাসরিমা নাসরিন, কমিউনিটি এন্ড মাইরেনেট এ
পার্ট শংকর পাল।
এদিকে এর আগে সাঁওতালরা তীর
ধুনক ও লাঠি হাতে নিয়ে বাপ-দাদার জমি ফেরত ও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার
করে বিচারের আওতায় আনার দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি জয়পুর ও
মাদারপুর পল্লী প্রদক্ষিণ করে মাদারপুর গির্জার সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে
তারা সমাবেশে অংশ নেয়।
0 comments:
Post a Comment