Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

আশ্রয়ণ কেন্দ্রে নয়,বাপ-দাদার জমিতেই থাকতে চাই

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা:
আগামী ৬ নভেম্বর (সোমবার) গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীতে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের এক বছর।
এখনো সেদিনের কথা মনে করে ভয়ে আতকে উঠেন সাঁওতাল পরিবারের লোকজন। আগুনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নি:স্ব শতশত সাঁওতালরা আশ্রয় নেয় খোলা আকাশের নিচে।
এক বছর ধরে ঝুপড়ি আর তাবুর নিছেই খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন দুই শতাধিক সাঁওতাল ও বাঙালী পরিবার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূর্ণবাসনে ৩০০ শতাধিক পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে সেখানে যেতে রাজি নন সাঁওতালরা। সাঁওতালদের দাবি, হামলার সুষ্ঠ বিচারসহ পৈত্রিক সম্মতি ফেরত চান। নিজ জমিতেই তারা বসতি গড়ে তুলতে চান।
গেল বছরের ৬ নভেম্বর সকালে রংপুর চিনিকলের আওতাধীন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ চিনিকলের (সাহেবগঞ্জ-বাগদা) এলাকার জমিতে বসতি গড়ে তোলা দুই শতাধিক সাঁওতাল ও বাঙালী পরিবারের উপর হামলা ও লুটপাট চালায় পুলিশ ও মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। এসময় সংঘর্ষ বাঁধলে সাঁওতালদের ছোড়া তীরের আঘাতে ৯ পুলিশ সদস্য আহত হন।
এছাড়া পুলিশের ছোড়া গুলিতে তিন সাঁওতাল নিহত ও অনন্ত ৩০ জন আহত হন। পরে বিকেলে পুলিশ আগুন দিয়ে সাঁওতাল ও বাঙালীদের দুই শতাধিক বসতি পুড়িয়ে দেয়। লুটপাট করা হয় তাদের ধান, গম, ডালসহ ঘরের মালামাল। প্রাণ ভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে শিশুসহ নারী-পুরুষরা। এরপর পরিবার-পরিজন নিয়ে মাদারপুর এবং জয়পুরপাড়ার খোলা আকাশের নিচে ঝুপড়ি ঘর তেরি করে আশ্রয় নেয় সাঁওতাল ও বাঙালী পরিবারের লোকজন।
সরেজমিনে শনিবার সকালে মাদারপুর ও জয়পুরপাড়ার সাঁওতাল পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো আজও ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘর আর ত্রিপলের তাবুতে বসবাস করছেন। বসবাস করা সাঁওতালদের অভিযোগ, খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়ার পর প্রথম দুই-তিন মাস সরকারী-বেসরকারী ও এনজিও থেকে তাদের সহযোগিতা করা হয়। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত তারে খোঁজ আর কেউ রাখেনি। হামলা-মামলার এক বছর হলেও ভয়-আতষ্ক আর অব্যহত হুমকিতে অনেকে বাইরে গিয়ে কাজকর্ম করতে পারছেন না।
সাহেবগঞ্জ-বাগদা ভূমি উদ্ধার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘হামলা, ভাঙচুর, আগুন ও লুটপাট এবং গুলি করে তিন সাঁওতাল হত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এরপর থেকে জড়িতদের গ্রেফতারসহ তাদের পূর্ণবাসনে নানা আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই কিছুতেই। ফলে বিচার নিয়েও শষ্কায় রয়েছেন তারা’।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে বোগদহ এলাকায় সাঁওতাল-বাঙালী তিন শতাধিক পরিবারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে পূর্ণবাসনের জন্য যে আশ্রয়ণ প্রকল্প (ব্যারাক) নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে যেতে রাজি নন সাঁওতাল-বাঙালীরা। সাঁওতালরা কোন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যাবেন না, আমরা আমাদের বাপ-দাদার জমি ফেরত চাই। জমি ফেরত পেলে আমরা সেখানেই বসতি গড়ে তুলবো’।
পুলিশের গুলিতে আহত হোপনা মুরমু বলেন, ‘বুকে গুলির ক্ষত আজও ঠিকভাবে শুকায়নি। এখনো বুকে ব্যাথা আছে। তাছাড়া হামলার ঘটনার কথা মনে হলে ভয়ে বুক কেপে উঠে তার। বাইরে বের হয়ে ঠিকভাবে কাজকর্ম করতে পারেন না। সেই ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করায় রোদ-বৃষ্টি আর ঝড়ে নানা দুর্ভোগে পড়তে হয়। এছাড়া তিনি বেলা খাবার না খেয়েও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে আছেন তিনি’।
পলুস মাষ্টার বলেন, ‘হামলার এক বছর হলেও আমাদের কোন উন্নতি হয়নি। হামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তারা গ্রেফতার হয়নি। এছাড়া নিহত ও আহত পরিবারের মানুষসহ অনেকে মানবেতর দিনাতিপাত করছেন’।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিলাব্রত কর্মকার বলেন, ‘তিন শতাধিক পরিবারের পূর্ণবাসনে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে সেখানে মাটি ভরাট কাজ শেষ হয়েছে। অল্প সময়ে সেনাবাহির সদস্যর আশ্রয়ণ প্রকল্পে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করবে’।
জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, ‘সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পে তিন শতাধিক পরিবার বসবাসের সুযোগ পাবে। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে সাঁওতালদের পূর্ণবাসনসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে সাঁওতালদের না যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাঁওতালদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিয়ে যেতে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে তাদের বুঝিয়ে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে পূর্ণবাসন করা সম্ভব হবে’।
সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় দায়ের হওয়া পৃথক দুটি মামলা তদন্ত করছে পুলিশ বুরে‌্য অব ইনভিস্টেকশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের গাইবান্ধা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন মিয়া বলেন, ‘মামলা দুটি তদন্ত কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে লুটপাট হওয়া কিছু মালামাল উদ্ধার ও জড়িত বেশ কিছু আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন হলে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে’।
এদিকে, এক বছর পূর্তিতে আগামী ৬ নভেম্বর সমাবেশের ডাক দিয়েছে সাঁওতালরা। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও জনউদ্যোগ সাপমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১০টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

2 comments:

  1. CasinoSecret – Welcome to the best online casino 2021
    The Wizard of Vegas Casino. Since 1999, there have been over 10 クイーンカジノ online casinos カジノ シークレット operating from one of the most reputable and 1xbet trusted casinos around,

    ReplyDelete