ড. সৌরভ সিকদার
ড. সৌরভ সিকদারড. সৌরভ সিকদার
ড. সৌরভ সিকদার
বাংলাদেশে ৪৫টিরও অধিক ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা আদিবাসী (ওহফরমবহড়ঁং) রয়েছে। বাংলাদেশ জন-গণনা রিপোর্ট ১৯৯১ অনুযায়ী এদের মোট সংখ্যা ১২ লাখ হলেও আর্য (অৎুধহ) আগমনের পূর্বে এ অঞ্চলের আদি বাসিন্দা মূলত এই আদিবাসীরাই। সভ্যতার আলো ও স্বপ্নবঞ্চিত এই আদিবাসীরা এখনো নিজভূমিতে পরবাসী। তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি পরিবর্তিত হতে হতে হুমকির সম্মুখীন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ কথা বললে অতিরিক্ত বা অত্যুক্তি হবে না যে আদিবাসী সংস্কৃতি আজ বিপন্ন প্রায়। এ কথার সত্যতা পাওয়া যায় বাংলাদেশের আদিবাসী ফোরাম প্রধান যে দুটি বিষয় নিয়ে সংগ্রাম করছে তার প্রথমটি হচ্ছে ভূমি-অধিকার এবং দ্বিতীয়টি নিজস্ব সংস্কৃতির সংরক্ষণ এছাড়াও মাতৃভাষা রক্ষা ও মাতৃভাষার প্রাথমিক লাভের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার। বাংলাদেশের আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতির পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল মূলত ঔপনিবেশিক কালে। তবে তখন এই পরিবর্তন সীমিত ছিল মূলত ধর্মান্তর (মিশনারিদের মাধ্যমে খ্রিস্ট ধর্মগ্রহণ) এবং আদিবাসীদের ভাষায় কিছু কিছু বহিরাগত শব্দ অনুপ্রবেশের মাধ্যমে। যেমন-ঋধঃযবৎ, খ্রিষ্ট্র প্রভৃতি বিদেশি শব্দ তারা এ সময় ব্যবহার করতে শুরু করে। কলোনি শাসনামলে আদিবাসীদের সমাজ কাঠামো এবং তাদের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন না হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ্য করা যায়-স্থবির অর্থনীতি, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রজা-প্রভু সম্পর্ক এবং আদিবাসীদের বাসস্থান প্রত্যন্ত এলাকায় বা গভীর বনে হওয়া। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের আদিবাসীদের সমাজ-সংস্কৃতি এবং ভাষার ক্ষেত্রে প্রধান পরিবর্তন শুরু হয় ঔপনিবেশ-উত্তর আমলে। বিশেষ করে আদিবাসীদের বিভিন্ন জাত-গোষ্ঠীর সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মূলত শিল্পায়ন এবং আধুনিকায়নের জন্যই এ ধরনের পরিবর্তন ঘটে থাকে। বাংলাদেশের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো প্রধান কারণ হয়ে দেখা দেয়নি। যদিও আধুনিকায়নের বিষয়টি এর সঙ্গে জড়িত আছে। বাংলাদেশের প্রধানত উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ-পূর্ব (চট্টগ্রাম) এবং পূর্ব-উত্তর (সিলেট) সীমান্তজুড়ে আছে আদিবাসীরা। এ দেশের অধিকাংশই দুর্গম পাহাড়-প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করে। আর উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে (উত্তরবঙ্গ) বাস করে সাঁওতাল, ওঁরাওসহ অন্যান্য কয়েকটি আদিবাসী জাতি। এরা মূলত সমতলভূমির বাসিন্দা এবং কৃষিই প্রধান জীবিকা। অঞ্চল ও অবস্থান ভেদে কলোনিউত্তর সময়ে এদের পরিবর্তনের ধারাও ভিন্ন ভিন্ন।বাংলাদেশের আদিবাসীগণ বাঙালিদের মতোই হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে এবং তা পালন করে আসছে। এখানে বলে নেয়া ভালো যে বাংলাদেশের সংখ্যাধিক্য জনগোষ্ঠীর (৮০%) ধর্ম ইসলাম হলেও আদিবাসীদের মধ্যে এই ধর্ম গ্রহণের তথ্য আমরা পাই না। অধিকাংশ উপজাতি বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হলেও এদের প্রায় প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব নাম-ধাম, আচার-নীতি, উৎসব সংস্কার চিকিৎসা পদ্ধতি (এখন লুপ্তপ্রায়) ভাষা ও সংস্কৃতি। যা তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বংশপরম্পরায় বহন করে চলছে। তাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে জড়িত এই সংস্কৃতি মূলত অন্যদের থেকে তাদের পৃথক করে তুলছে। যে কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি পরিবর্তনের দুটি প্রধান কারণ হচ্ছে_ (১) স্থানচ্যুতি (২) অন্য জাতি কর্তৃক অধিনস্ত হওয়া। বাংলাদেশের অধিবাসীদের ক্ষেত্রে এ দুটি কারণ তো আছেই সেই মানুষ তথা রাষ্ট্রসৃষ্ট অসংখ্য কারণও সক্রিয়। গ্লোবালাইজেশন ও অন্যান্য সংস্কৃতির আগ্রাসনের ফলে এদের সঙ্গে অন্যের এবং এক জাতির সঙ্গে অন্য জাতির সংস্কৃতির সংঘাত ঘটেছে তেমনি ১৯৭৪ সালে বৃটিশ শাসনের অবসান হলে ভারতবর্ষ যথা ভারত ও পাকিস্তান দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে নতুন দুটো রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে তখন কোনো রাষ্ট্রই তাদের আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেয়নি। পাকিস্তান আমলে আদিবাসীদের মানবিক সংস্কৃতির অধিকার বলে কিছু ছিল না। তারা ছিল সত্যিকার অর্থে দেশের অবহেলিত মানুষ।
১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের পরও তারা স্বীকৃতি পাননি। এর প্রমাণ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনা মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতাকে (১৯৭৮ সালে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে এই ধর্ম নিরপেক্ষতাও লুপ্ত হয়) গ্রহণ করা হলেও পরবর্তী সময়ের কোনো শাসকেই যথার্থ গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদের পরিচয় দিতে পারেনি। ফলে গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্র, উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ এমনকি অনেক সময় রাষ্ট্রযন্ত্রেও আগ্রাসী চরিত্রেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। রাজ্যব্যবস্থা ও শাসকদের এই চরিত্রের কারণে গণতন্ত্র যেমন সত্যিকারের বিকাশ লাভ করতে পারেনি, তেমনি আদিবাসী সংস্কৃতি তাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি বিকাশের পরিবর্তে সংখ্যাধিক্য জনগণের বাঙালি সংস্কৃতির দ্বারাই প্রভাবিত হয়ে বদলে ফেলেছে তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালি বলিয়া পরিচিত হবেন। অর্থাৎ এ দেশের সকল আদিবাসীর পরিচয় হবে বাঙালি। বাংলাদেশের জনগণ হলেও যে তারা বাঙালি নন এ সত্যকে তো অস্বীকার করার উপায় নেই। কাজেই রাষ্ট্রই যখন তাদের বাঙালি পরিচয়ে সংবিধানে গ্রহণ করেছেন, ফলে অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত, পশ্চাৎপদ এই সব আদিবাসীর পক্ষে নিজস্ব জাতি পরিচয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থায় নাগরিকদের জন্য যে সমস্ত অনিবার্য অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় তা বাস্তবায়ন বা ভোগ করতে গণতন্ত্র নিঃসন্দেহে অনিবার্য দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ছাড়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসমূহের অধিকার সংরক্ষণ বা সমুন্নত করার কথা ভাবাই যায় না। দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বিরাজ করলে ক্ষুদ্র বৃহৎ নির্বিশেষে সকল জনগোষ্ঠীর অধিকার ভোগ করায় নিশ্চয়তা সবচেয়ে বেশি থাকবে। এর ফলে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের চর্চা না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আদিবাসীরাও। ঔপনিবেশ-উত্তর আমলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটলেও তাদের সংস্কৃতিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিগত ৬০ বৎসরে (১৯৪৭ সালের পর) বাংলাদেশের আদিবাসী জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও তাদের জায়গা জমি বৃদ্ধি তো পায়নি বরং সঙ্কুচিত হয়েছে। ফলে জীবন ও জীবিকার তাগিদে তারা নিজ নিজ অঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র গমন করেছে অথবা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। আর এ কারণে তাদের মিসতে হয়েছে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল বাঙালিদের সঙ্গে। সঙ্গত কারণেই তাদের সংস্কৃতি-ভাষা প্রভাবিত করেছে এবং করছে। এ প্রয়াস বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের সাঁওতাল আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতির পরিবর্তনের কথঅ বলা যেতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের মধ্যে প্রধান বা গরিষ্ঠ হচ্ছে চাকমা। বাংলাদেশে এদের সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ। ঔপনিবেশ-উত্তর সময়ে এদের ভাষা ও সংস্কৃতিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বাংলাদেশের নৃ-বিজ্ঞানীদের অভিমত। চাকমাদের এই ঐতিহ্য বাহী জুমচাষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৯৬১ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের কারণে। সে সময় এলাকার কৃষি জমির ৪০% অর্থাৎ ৫৪ হাজার একর জমি পারিন নিচে ডুবে যায়। ফলে জুম চাষে নিয়োজিত চাকমা ও অন্যান্য আদিবাসীদের ৫০% বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে ফল-ফলাদি ও অন্যান্য শাক-সবজি চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। জুম চাষ এ অঞ্চলের আদিবাসীদের শুধু অর্থনৈতিক ভিতই রচনা করে নি যুগ যুগ ধরে এই সহজ জীবন ব্যবস্থা তাদের দান করেছে আনন্দ। চাকমাদের পালাগানে (ভরন্দী আদাম) জুম নিয়ে আনোন্দ আবেগ বর্ণনা হয়েছে। পাবত্য চট্টগ্রামের জুমচাষ তাই এখানকার আদিবাসীদের সমাজ, সংস্কৃতি বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। জুম চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বর্তমানে জুম কেন্দ্রিক অনষ্ঠান উৎসব এমকি সাহিত্য চর্চা ও সীমিত হয়ে পড়েছে। যেমন: ঞ.ঐ খবহি তাঁর ডরষফ জধপবং ড়ভ ংড়ঁঃয ঊধংঃবৎহ ওহফরধ. (১৮৭০) গ্রন্থে জুম চাষ কেন্দ্রিক একটি উৎসবের উল্লেখ করেছেন যা চাকমাদের ভাষায় 'মাগিরি' এবং একটি অনুষ্ঠান 'সাবাং'। বর্মমানে এ দুটি সাংস্কৃতিক কর্মকা-ই লুপ্ত বলা যায়। এ ছাড়া জুম অর্থনীতির উপর ভিত্তিকরে এখানকার সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যা ছিল একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা সমবায়ের ভিত্তিতে কাজ করে প্রতিটি গ্রামই ছিল অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসারও সামাজিক শ্রেণী বিন্যাস (রাজা-প্রজা) ভেঙ্গে গেলে পরিবর্তনটা অনিবার্য হয়ে যায়। একসময় আদিবাসী যুবক যুবতীদের মধ্যে অবাধ মেলা মেশায় বিধি নিষেধ ছিল বতমানে প্রাম বা গোত্রকেন্দ্রিক সমাজ পরিবর্তন ঘটায় অবাদ মেলা মেশার সুযোগ তৈরি হয়েছে চাকমাসহ অনেক সমাজেই। যে কোন সমাজে বিরাট একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক বিষয় বিয়ের অনুষ্ঠানসমূহ। অনেক আদিবাসীরই ঐতিহ্যবাহী বিবাহের রূপ বদলে গেছে। চাকমা সমাজে পূর্বে বিবাহে 'চুমুলাঙ' নামের একটি অনুষ্ঠান সম্পন্ন না করলে বিবাহ বৈধ হত না, বর্তমানে এ অনুষ্ঠান লুপ্ত প্রায়। এবার চাকমাদের ভাষার প্রসঙ্গে পৃথক ভাবে আলোচনা করা যেতে পারে। ইন্দে-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের একটি ভাষা হচ্ছে চাকমা। বাংলা সাথে এর সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও এটা একটি পৃথক ভাষার মর্যাদা লাভ করার সব যোগ্যতাই রয়েছে। তবে ধর্মীয়, ভৌগোলিক ও অবস্থানগত কারণে তিব্বতি-বর্মী পরিবারের ভাষার যাথেষ্ট প্রভাব এই ভাষায় পাওয়া যায়। জাতিগত ভাবে অন্যান্য আদিবাসীর তুলনায় অগ্রসর হওয়ার এবং বাঙালি ও বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সানি্নধ্যে আসায় বর্তমানে এদের নিজস্ব ভাষা ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চাকমা ভাষার নিজস্ব লিপি ঙলযধঢ়ধঃধ এখন আর চাকমারা ব্যবহার করে না। বরং বাংলা লিপিই ক্রমে ক্রমে গ্রহণীয় হয়ে উঠছে। টাকমারা বাংলা লিপিতেই সাহিত্য চর্চা করছে বর্তমানে। তাছাড়া পরিবারে মাতৃভাষার ব্যবহার করলেও বাইরে অন্যান্য আদিবাসীর ভাষার অবস্থাও প্রায় এক। উল্টর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজবংশী, রাজোয়ার প্রভৃতি আদবাসীদের ভাষা হারিয়ে এখন বাংলা ভাষায় কথা বলে তারা।
কলোনির উত্তরকালে বাংলাদেশের আদবাসীরা যখন নাগরিক ভোটাধিকার লাভ করে এবং রাষ্ট্রীয় শাসনের কার্যকর অন্তর্ভুক্তি ঘটে, তখন তাদের ছোটগোত্র বা সমাজ প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী বিচার ব্যবস্থা লুপ্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ একজন আদিবাসী অপরাধ করলে আগে যেমন স্থানীয় বা গোত্র পরিষদে বিচার করা হতো এখন তা পরিবর্তিত হয়ে রাষ্ট্রীয় পরিষদে বা পর্যায়ে করা হয়।
এ ছাড়াও ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের বেশকিছু আদিবাসীর ছিল ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতি। তারা তাদের পাহাড় অরণ্যে প্রাপ্ত উদ্ভিদগুলো দিয়েই চিকিৎসা করে আসছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু সভ্যতার সম্প্রসারণ এবং নাগরিক জীবন চিকিৎসার সুযোগ তৈরি হওয়ায় ক্রমে ক্রমে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি অধিকার করে নেয় আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতির এক ঐতিহ্যবাহী উপাদান ভেষজ চিকিৎসা। একইভাবে তাদের খাদ্যাভ্যাসে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না ঘটলেও ছেলেরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছেড়ে নাগরিক সাংস্কৃতির আধুনিক পোশাক পড়ছে-চাকমা-মারমা, সাঁওতাল-ওরাও, গারো-হাজং প্রভৃতি এলাকা ঘুরলেই এই তথ্য প্রমাণিত হয়। নাগরিক সুবিধাপ্রাপ্ত এলাকাতে চাকমারা বাংলা গান শুনছেন অবাধে। ফলে নিজস্ব সঙ্গীত চর্চা ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে।
যে কোনো সমাজ প্রকৃতি এবং সভ্যতার সামাজিক নিয়মেই কিছু পরিবর্তন ঘটে থাকে। বাংলাদেশের আদিবাসীদের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন ঘটেছে যা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু রাষ্ট্রসৃষ্ট সঙ্কটের কারণে যায় না। যেখানে রাষ্ট্রের উচিত এই সমস্ত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করা, অথচ এখানে তারা বিপরীত আচরণ করছে। এশিয়ার দুটি রাষ্ট্র ফিলিপাইন এবং নেপালে আদিবাসীদের রক্ষার জন্য আইন তৈরি করা হয়েছে। যা তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকারসহ এগুলোকে অবিকৃত থাকতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের প্রায় ৩০ লাখ আদিবাসীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন তৈরি এবং তা বাস্তবায়ন সম্ভবত এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ।
আর তা না করলে এ দেশের আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি যে বিপন্ন থেকে বিপন্নতর হয়ে পড়বে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
উৎস: http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=06-12-2012&feature=yes&type=single&pub_no=319&cat_id=3&menu_id=75&news_type_id=1&index=5
0 comments:
Post a Comment