Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষা

আমানুল্লাহ নোমান
নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ভিন্ন ভিন্ন জাতি। একটি জাতি অথবা বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একটি দেশ। বাংলাদেশে এরকম ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংখ্যা ত্রিশের অধিক। প্রত্যেক জাতিসত্তা এবং তাদের গোত্র-উপগোত্রের নিজস্ব ভাষা-উপভাষা রয়েছে। বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের ভাষা তাদের নাম অনুসারে পরিচিত। বাংলাদেশে উপজাতিদের বসবাস পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট, পটুয়াখালী ও বরগুনা অঞ্চলে। এ দেশে বাঙালি ছাড়াও অন্য জাতিসত্তাগুলোর নাম পাওয়া যায় তা হল_ চাকমা, দৈনংনাক, মারমা, রাখাইন, মগ, খুমি, লুসেই, লংগি, শিকাম, কুকি, থেডু, মণিপুরী, মৈতি, পাঙন, মুরং, হাজং, ত্রিপুরা, টিপরা, গারো, সাঁওতাল, রাজবংমী, ওরাও, পাঙ্খো, খিয়াং, খাসিয়া, বানাই, ডালু, মু-া, খোন্দ, আসাম, গোর্খা, কর্মকার, পাহান, রাজুয়ার, মুসহার, রাই, হদি, মান্দাই, বেদিয়া, কোল, মুরিয়ার, মাহালী, মালো, উসুই, রিয়াং, সেন্দুজ, থাম্বরগ্যা, থাম্বনী, উরুয়া, মালপাহারী, হো, বনো, হরিজন, মাহাতো, কোচ, ক্ষত্রিয়, বর্মণ, কেওট ইত্যাদি। এসব জাতিসত্তার মধ্য থেকে যে ভাষার সন্ধান পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল_ ওরাও, খাসিয়া, গারো, আচিক কতা, চাকমা, মগ, মণিপুরী, মু-া ও সাঁওতালি কাচারি, কুকি, তিপরা, মালপাহাড়ি, মিকির, শাদ্রি ও হাজংনাম। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও সিলেটের চা-বাগান এলাকায় প্রায় লক্ষাধিক লোকের মাতৃভাষা ওঁরাও। এ ভাষাভাষীদের সর্বোচ্চ সংখ্যা রংপুরে এবং সর্বনিম্ন সংখ্যা সিলেটে। খাসিয়ারা ওঁরাও ভাষায় কথা বলে। এ ভাষা কুরুখ নামে পরিচিত। এর কোনো লিখিত রূপ নেই, তবে লোকসাহিত্যসমৃদ্ধ। এতে অসংখ্য উপকথা, রূপকথা, গীতি, ছড়া ধাঁধা, প্রবাদ ইত্যাদি রয়েছে। শিক্ষিত ওঁরাওরা বাংলা অথবা ইংরেজি অক্ষরে লিখে থাকে। এ ভাষায় পার্বণভিত্তিক গান আছে। আচিক কথা অর্থাৎ পার্বত্য গারো ভাষা বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং ভারতের মেঘালয় সীমান্তে পার্বত্য গারো অঞ্চলে প্রচলিত। রংপুর, সুনামগঞ্জ এবং ঢাকা জেলার শ্রীপুরেও কিছুসংখ্যক গারোভাষী লোক আছে। তাদের ভাষা চীনা-তিব্বতি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এবং অনক্ষর ও অলিখিত একটি প্রাচীন অনার্য ভাষা। চীনা ভাষার সঙ্গে এ ভাষার শব্দ, ব্যাকরণ ও ভাষাতত্ত্বগত প্রচুর মিল রয়েছে। এ ভাষা প্রবাদ-প্রবচন, বাংলা ও অসমিয়া ভাষার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকার কারণে গারো শ্লোক, গান, ছড়া, কিংবদন্তি, উপকথা, পালাগান ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ। এ ভাষায় বাক্যগঠন, পদবিন্যাস, বিভক্তি-প্রত্যয়ের অবস্থান, ক্রিয়া ও শব্দের রূপান্তর উন্নত ভাষার মতো সুশৃঙ্খল। এ থেকে অনুমান করা হয় যে, ভাষাটির অতীত ঐতিহ্য ছিল। গারোরা বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করায় এ ভাষায় বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপ দেখা যায়। খ্রিস্টান মিশনারিরা গারো ভাষায় রোমান অক্ষর প্রচলন করে। পরে চীনা ত্রিলিপির ন্যায় এক ধরনের লিপিমালা আবিষ্কার ও প্রয়োগের চেষ্টা করে; কিন্তু কোনোটাই স্থায়ী হয়নি। বাংলা হরফে গারো ভাষা স্বাচ্ছন্দ্যে লেখা যায়। বর্তমানে গারোদের পারিবারিক ভাষা গারো; কিন্তু পোশাকি ভাষা বাংলা। বাংলাদেশে মু-াভাষীর সংখ্যা ১৫-২০ হাজার। মু-াভাষা অস্ট্রো এশীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং ভারতীয় আর্য ভাষা থেকেও প্রাচীনতর। এ ভাষা উড়িয়া, অসমিয়া ও বাংলা ভাষার প্রাথমিক ভিত রচনা করেছে। অসংখ্য মু-া শব্দ বাংলা ভাষায় বিশেষত আঞ্চলিক ভাষায় বিদ্যমান। কৃষি, গৃহস্থালি, বসতি, গণনা, আত্মীয়, ওজন, ভূমি, পশুপাখি, গাছগাছড়া ইত্যাদি শব্দ মু-া ভাষা থেকে আগত। পার্বত্য ও চট্টগ্রামে তিন লাখের অধিক লোক চাকমা ভাষায় কথা বলে। এ ভাষা উপজাতীয় ভাষাগুলোর মধ্যে উন্নততর। বর্তমানে চাকমা ভাষায় ব্রহ্মদেশীয় লিপি ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। প্রায় ২৫০ বছর আগে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে মণিপুরী ভাষার প্রচলন হয়। মণিপুরী ভাষা মোঙ্গলীয় ভাষা- পরিবারের তিব্বতি-বর্মি শাখার কুকি-চীন গোষ্ঠীভুক্ত। মৈতি জাতির নাম অনুসারেও উনিশ শতকের পূর্বাব্দ পর্যন্ত এ ভাষার নাম ছিল মৈতি, অতঃপর মণিপুরী নামে অভিহিত হয়। ঢাকার তেজগাঁও, দুর্গাপুর, এবং কুমিল্লার কসবা অঞ্চলে এ ভাষার প্রচলন ছিল। বর্তমানে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার অর্ধলাখ লোক মণিপুরী ভাষায় কথা বলে। মগ ভাষার আদি স্থান আরাকান। বাংলাদেশের দুই লাখেরও বেশি লোক মগ ভাষায় কথা বলে। মগভাষা আরাকানি ভাষার কথ্যরূপ এবং একটি সংকর ভাষা। সাঁওতালি ভাষা অস্ট্রো এশীয় ভাষাগোষ্ঠীর প্রাচ্য শাখার অন্তর্ভুক্ত। প্রায় ১০ হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া হয়ে ব্রহ্ম দেশ ও আসামের ভেতর দিয়ে অস্ট্রো-এশীয় জনগোষ্ঠী ভারত উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সাঁওতাল ভাষার দুটি উপভাষা রয়েছে। বিভিন্ন জাতিসত্তার বিভিন্ন ভাষা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ভাষার লিখিত রূপ নেই, বর্ণমালা নেই। আবার কোনো কোনো ভাষা ও সংস্কৃতি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। এসব ভাষা ও সংস্কৃতি অবিলম্বে সংগৃহীত, বর্ণিত ও বিশ্লেষিত হওয়া দরকার।
Source: http://www.dainikdestiny.com/index.php?view=details&type=main&cat_id=1&menu_id=63&pub_no=77&news_type_id=1&index=1&archiev=yes&arch_date=18-02-2012
Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment