Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদান নতুন বছরেই শুরু করা হোক


বিশেষ প্রতিনিধি | আপডেট: ২২:২৪, ডিসেম্বর ২১, ২০১৩ 
 আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা নতুন বছরেই শুরু করা হোক। আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। পাঠ্যসূচি তৈরি, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও শিক্ষক প্রশিক্ষণের কাজ দ্রুত শেষ করে আদিবাসী শিশুদের বিদ্যালয়ে নেওয়া জরুরি।
আজ শনিবার ‘প্রথম আলো’ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা: মূলধারায়নের কৌশল’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা এই অভিমত দিয়েছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য চিলড্রেনের সহায়তায় ‘প্রথম আলো’ এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সরকারের দুজন সচিব, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আদিবাসী নেতা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে জানানো হয়, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রি—এই পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করবে। গোলটেবিল বৈঠকে সেভ দ্য চিলড্রেনের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক মেহেরুন নাহার বলেন, এই পাঁচটি ভাষাভাষী শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি। এদের জন্য পাঠ্যসূচি, পাঠ্যবই তৈরি হয়নি। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও হয়নি।


একাধিক বিশেষজ্ঞ বলেন, শিশুকে শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়া জরুরি। এরপর সে ধীরে ধীরে মাতৃভাষার সঙ্গে অন্য ভাষায় (বাংলাদেশের জন্য বাংলা) শিক্ষা নেবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সময় সাত বছর। এই সময়টাকে বলে ‘ব্রিজিং পিরিয়ড’। পরবর্তী সময়ে সে ইংরেজি শিখবে।
ন্যাশনাল কারিকুলাম ও টেক্সট বুক বোর্ডের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে সরকার আন্তরিক। তবে সরকার যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে চায়। তিনি বলেন, শিশুদের বই সরাসরি অনুবাদ করলে হবে না। তা পরিগ্রহণ (অ্যাডাপ্ট) করতে হবে, যেন শিশুর পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়। এরপর তা স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা সভায় তুলতে হবে। তারপর তা জাতীয় কাউন্সিলে পাস করিয়ে নিতে হবে। সবশেষে তা স্কুল পর্যায়ে যাবে। এই প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শেষ হবে, শফিকুর রহমান তা বলেননি। তবে বলেছেন, খুব বেশি সময় লাগবে না।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা প্রশ্ন তোলেন, আদিবাসীদের অনেকের ছেলেমেয়ে ঢাকার ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ছে, আর বাজার অর্থনীতির যুগে লোগাং বা পানছড়ির আদিবাসী শিশুকে মাতৃভাষায় শিক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটা বৈষম্য তৈরি করছে কি না। তিনি বলেন, ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত ৩৩২টি স্কুল অর্থসংকটের কারণে বন্ধ হতে চলেছে। কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এক্ষুনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরাসহ বৈঠকে উপস্থিত প্রায় সবাই আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানান। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করা হলেও খসড়া শিক্ষা আইনে তা ব্যবহার করা হয়নি। ‘মাতৃভাষা শিক্ষা’ ও ‘মাতৃভাষায় শিক্ষা’র মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য। জাতীয় শিক্ষানীতিতে আদিবাসী শিশুদের ‘মাতৃভাষা শিক্ষা’ কথাটি ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ রকম আরও অনেক নীতিগত ও মৌলিক বিষয়ের সমাধান জাতীয়ভাবে হয়নি। তিনি বলেন, দাতাদের অর্থায়নে শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ না হয়ে আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার উদ্যোগ সাংবিধানিকভাবেই হওয়া উচিত ছিল।
স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও ‘প্রথম আলো’র সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, মানুষ স্বপ্ন দেখে মাতৃভাষায়। মাতৃভাষায় স্বপ্ন দেখা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা উচিত নয়।
খাগড়াছড়ির জাবারং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা ও লিখিত উপাদান কম। তিনি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও অভিধান তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৌরভ সিকদার বলেন, পাঠ্যপুস্তক তৈরি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, বিশেষজ্ঞ তৈরি না হওয়ায় মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে আছে। তিনি অভিযোগ করেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এবং কাজের সমন্বয়ের অভাবে আদিবাসী শিশুদের পাঠ্যবই এখনো তৈরি হয়নি।
আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, সংবিধানে বাংলাদেশের সব মানুষকে বাঙালি বলা অন্যায়, অগ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক সনদের লঙ্ঘন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক পুলক চাকমা বলেন, নিজেদের ভাষায় শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে আদিবাসীদের নিজেদের প্রস্তুতি নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি ভাষানীতি থাকা দরকার। তিনি জানান, কোথায় কী ভাষায় কথা বলে, তার একটি জরিপ করতে যাচ্ছে সরকার। কোন ভাষা হারিয়ে গেছে, তাও এই জরিপ থেকে জানা যাবে।
সরকার আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার বিষয়ে কখন কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তার বর্ণনা দেন গণসাক্ষরতা অভিযানের কার্যক্রম ব্যবস্থাপক তপন কুমার দাশ।
সাঁওতালেরা কোন লিপি ব্যবহার করবে—এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বলে সরকারি উদ্যোগের প্রাথমিক পর্যায়ে তারা অন্তর্ভুক্ত হতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে ব্র্যাকের পরিচালক আন্না মিনয বলেন, কোনো উদ্যোগ আদিবাসীদের মধ্যে সামান্যতম কোনো বিরোধ বা বিভেদ সৃষ্টি করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
সেভ দ্য চিলড্রেনের শিক্ষা সেক্টরের উপদেষ্টা ম. হাবিবুর রহমান বলেন, আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষকের স্বল্পতা আছে। একটু সুযোগ দিয়ে হলেও আদিবাসীদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
আলোচনার সমাপনী পর্বে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব কাজী আখতার হোসেন বলেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশ এগোচ্ছে। এ দেশের সব জাতিগোষ্ঠীর শিশুরাই শিক্ষা অর্জন করবে। আপাতত যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা অচিরেই দূর করার আশ্বাস দেন তিনি।
Source:http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/104755/%E0%A6%86%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80_%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%83%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A7%9F_%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%A8_%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A8_%E0%A6%AC%E0%A6%9B%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%87  
Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment