Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

শত বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সাঁওতাল পল্লীতে মানিকছড়ি

বিংশ শতাব্দির শুরুতে ভারতের আসাম ও মায়ানমারের আরাকান থেকে পার্বত্য খাগড়াছড়ির দুর্গম জনপদ লক্ষ্মীছড়ি ও মানিকছড়িতে সাঁওতালদের আগমন। তখন থেকে এসব গ্রামের নামকরণ হয় সাঁওতাল পল্লী। এর একটি মানিকছড়ি উপজেলার ধাইজ্যা পাড়ার সাঁওতাল পল্লী। যুগের পর যুগ মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এখানকার সাঁওতাল অধিবাসীরা।

সরজমিন ঘুরে জানা গেছে, ১৯২০ সালে ভারতের আসাম এবং বর্তমান মিয়ানমারের আরাকান থেকে এ অঞ্চলে সাঁওতালদের প্রত্যাবর্তন। খাগড়াছড়ির দুর্গম জনপদ মানিকছড়ির ধাইজ্যা পাড়াস্থ সাঁওতাল পল্লীতে ২৬ পরিবারে দু’শতাধিক সাওতালের বসবাস। অসহায় সাঁওতালরা শত বছরেও পায়নি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা। তারা তাঁদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে নিতে পারেনি। কারণ আজোও এ পল্লীর আশে-পাশে গড়ে ওঠেনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয় এসব পল্লীর প্রতিটি শিশু অপুষ্টিতে ভোগছে। শিশু, কিশোরী ও গর্ভবতী মা কিংবা গৃহবধু সকলে স্বাস্থ্য সেবা অথবা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সর্ম্পকে জানেন না কিছুই। অভাব-অনটনের কারণে প্রতিনিয়ত পরের জমিতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন সাঁওতাল নর-নারীরা। আর শ্রমের বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে চলে তাদের সংসার। তবে গ্রামের নামকরণ হয়েছে সাঁওতালপাড়া এটাই যেন তাঁদের কাছে বড় পাওনা। গত সোমবার সরজমিনে গেলে কথা হয় প্রবীণ ব্যক্তি ও সর্দার (কার্বারী) গণেশ সাঁওতাল (৬৭) ও তাঁর পুত্র মিলন সাঁওতালের (৩৫) সাথে। এ গ্রামে জন্ম নেওয়া গণেশ সাঁওতাল জানান, তাঁদের সংগ্রামী জীবনে অধরা মৌলিক অধিকারের কথা। এ গ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই ফলে পাশ্ববর্তী রাঙ্গাপানিস্থ (৪কিলোমিটার দূরে) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ালেখা করা ছেলে-মেয়েদের ভাগ্যে জুটে না। তাও আবার প্রতিটি পরিবারে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী! পুরুষের পাশা-পাশি নারীরা ও পরের জমিতে শ্রম দিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। গ্রামের নারীরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে তেমন সচেতন নন। শিশুদের টিকা ও গর্ভবর্তী মায়েদের চিকিৎসায় তারা এক সময় ছিল অজ্ঞ। বর্তমানে এ বিষয়ে কিছুটা অবগত হলেও গ্রামে সচরাচর কোন পরিবার পরিকল্পনা কর্মী আসে না। মাসে, দু’মাসে আসলেও নগদ টাকা দিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি কিনে খেতে হয়! রাস্তাঘাটের অভাবে জরুরি প্রয়োজনে তারা উপজেলা সদরে (৮ কিলোমিটার) আসতে নানা বেগ পেতে হয়। এখানে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় তাঁরা বাংলা ভাষার পাশা-পাশি মাতৃভাষা বিলুপ্তির আশংকা করছে। গ্রামের অধিকাংশ নারী ও পুরুষরা শ্রম দিতে মাঠে থাকায় গ্রামে গিয়ে সবাইকে পাওয়া যায়নি। এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যেতে দেখা গেল পাহাড়ের ছড়া বা খাল থেকে ঝর্ণার (কূফ) পানি নিচ্ছে মায়েরা। তারা জানালেন, নালা এবং কূফের পানি আমরা নিয়মিত ব্যবহার করি। খোলা জায়গায় (নদীর পাড়ে) পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা। এ সময় কথা হয় তিনটহরী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য ও গ্রাম্য চিকিৎসক মো. মিজানুর রহমানের সাথে তিনিও অপকটে স্বীকার করলেন, সাঁওতাল পাড়ার অজ¯্র সমস্যার কথা। এই যখন মানিকছড়ির সাঁওতালপাড়ার অসহায় মানুষের জীবন চিত্র, তখন ভাবাই যায় সাঁওতালরা আজ সমাজে কত অবহেলিত। এ প্রসঙ্গে কথা হয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বাবুলের সাথে। তিনি জানান, শুনেছি সাঁওতাল পল্লীতে অনেক সমস্যা আছে। তবে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এটা ভাবিনি। অচিরেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাসহ সাঁওতালদের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।

Source:  http://www.dainikpurbokone.net/
Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment