‘ডহরবাবু’র পর এ বার ‘সাঁওতাল বিদ্রোহের অমর শহিদ বিরসা!’ চার বছরের ব্যবধানে হুল দিবসেই আবার ভুল।
সিধো-কানহো ডহরে সাঁওতাল বিদ্রোহের শহিদ স্মরণের অনুষ্ঠানে সিধো ও কানহো মুর্মুর উত্তরসূরিদের সংবর্ধনা দেওয়ার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোঁজ করেছিলেন, ‘ডহরবাবু’র পরিবারের লোক কেউ আছেন কি না। সেটা ২০১১-র ৩০ জুনের ঘটনা। ডহর বা চলার পথকে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেছিলেন, সাঁওতাল বিদ্রোহের কোনও শহিদের নাম।
আর মঙ্গলবার, এ বছরের হুল দিবসে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ‘সাঁওতাল বিদ্রোহের অমর শহিদ সিধো-কানহো-বিরসা’র প্রতি অন্তরের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তবে নিজের মুখে নয়। তাঁর সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর মুখ্যমন্ত্রীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপক বিজ্ঞাপনটি দিয়েছে। সেখানেই সিধো-কানহোর পাশে বসানো হয়েছে বিরসা মুন্ডার নাম। ঘটনাচক্রে, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরও মমতারই হাতে।
রাজ্যের বিজ্ঞাপন বিরসাকে সাঁওতাল বিদ্রোহের ‘অমর শহিদ’ বলে অভিহিত করলেও ইতিহাস কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে। প্রথমত, বিরসা সাঁওতাল নন। ফলে সাঁওতাল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা। দ্বিতীয়ত, সাঁওতাল বিদ্রোহ আর মুন্ডা বিদ্রোহের সময়কালও এক নয়। ফলে হুল দিবসে বিরসাকে স্মরণ করার যুক্তি নেই। সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা ১৮৫৫-র ৩০ জুন আর শেষ ১৮৫৬-র জানুয়ারিতে। ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী, বিরসার জন্ম হয় সাঁওতাল বিদ্রোহের ২০ বছর পরে, ১৮৭৫ সালে। তাঁর নেতৃত্বে মুন্ডা বিদ্রোহের সময়কাল ১৮৯৯ থেকে ১৯০০ সাল।
স্বাভাবিক ভাবেই এ দিন ছেপে বেরনো এই সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
আদিবাসী সমাজের গড়ন নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন পশুপতিপ্রসাদ মাহাতো। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যারা মঙ্গলবার দিনভর হুল উৎসব উদযাপন করছি, তারা এই বিজ্ঞাপন দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছি।’’ তাঁর বক্তব্য, বিরসার আন্দোলন সিধো-কানহোর আন্দোলনের প্রায় অর্ধ শতক পরের ঘটনা। দু’টোকে এক পংক্তিতে আনা কোনও ভাবেই উচিত নয়। পশুপতিবাবু বলেন, ‘‘রাজ্যের বিজ্ঞাপন, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর নামে যখন বিজ্ঞাপন বেরোচ্ছে, সেখানে এ ধরনের ভুল অভিপ্রেত নয়।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস শিক্ষক কিংশুক চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বিরসা মুন্ডাকে সাঁওতাল বিদ্রোহের শহিদ বলে উল্লেখ করা হলে সেটা ইতিহাসের চোখে অবশ্যই ভুল। কিংশুকবাবুর কথায়, ‘‘সাঁওতাল বিদ্রোহ আর মুন্ডা বিদ্রোহের মধ্যে ৪৪ বছরের ফারাক। সময়কাল শুধু নয়, দু’টো বিদ্রোহের ক্ষেত্র, পরিপ্রেক্ষিত, লক্ষ্য, চরিত্র সবই আলাদা।’’ ইতিহাসবিদদের অনেকেরই মতে, সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল ‘দিকু’-দের বা সামগ্রিক ভাবে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে, যাদের মধ্যে ইংরেজ শাসক, উচ্চবর্ণের জমিদার, জোতদারেরা সকলেই ছিলেন। আর মুন্ডা বিদ্রোহের লক্ষ্য ছিল, ব্রিটিশ রাজের অবসান ঘটিয়ে মুন্ডা শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী ও আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি সুকুমার হাঁসদাকে এ দিন এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি আজ সারা দিন হুল দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত আছি। কোথায় কী বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে, সেটা না দেখে মন্তব্য করতে পারব না।’’
তবে মুখ্যমন্ত্রীর নামে বিজ্ঞাপনটি বেরোলেও সেটি দিয়েছে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। সেই দফতরের সচিব ও আধিকারিকেরা এই ভুল করলেন কী ভাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রসঙ্গত ‘ডহরবাবু’ অধ্যায়ে বেশ কয়েক জন সচিব, আধিকারিক বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ভুল শুধরে দিতে গিয়ে চাকরিটা খোয়াই আর কী!’’ কিন্তু এ বার বিজ্ঞাপনের ভুল নিয়ে আঙুল প্রাথমিক ভাবে উঠেছে সচিব ও অন্য অফিসারদের দিকেই। তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে এ দিন বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস-এরও উত্তর দেননি। বিরোধীদের বক্তব্য, এমন ভুল একেবারেই অভিপ্রেত নয়। কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার অভিযোগ, ‘‘এটা বিপজ্জনক ভাবে ইতিহাসের বিকৃতি।’’ আর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, ‘‘যে মুখ্যমন্ত্রী হুল দিবসে ডহরবাবুকে খুঁজতে শুরু করেছিলেন, তাঁর সরকারের কাছে এমন বিজ্ঞাপন অপ্রত্যাশিত নয়।’’
http://www.anandabazar.com/state/mamata-makes-ridiculous-howler-again-describes-birsa-a-santal-rebel-1.168462
সিধো-কানহো ডহরে সাঁওতাল বিদ্রোহের শহিদ স্মরণের অনুষ্ঠানে সিধো ও কানহো মুর্মুর উত্তরসূরিদের সংবর্ধনা দেওয়ার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোঁজ করেছিলেন, ‘ডহরবাবু’র পরিবারের লোক কেউ আছেন কি না। সেটা ২০১১-র ৩০ জুনের ঘটনা। ডহর বা চলার পথকে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেছিলেন, সাঁওতাল বিদ্রোহের কোনও শহিদের নাম।
আর মঙ্গলবার, এ বছরের হুল দিবসে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ‘সাঁওতাল বিদ্রোহের অমর শহিদ সিধো-কানহো-বিরসা’র প্রতি অন্তরের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তবে নিজের মুখে নয়। তাঁর সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর মুখ্যমন্ত্রীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপক বিজ্ঞাপনটি দিয়েছে। সেখানেই সিধো-কানহোর পাশে বসানো হয়েছে বিরসা মুন্ডার নাম। ঘটনাচক্রে, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরও মমতারই হাতে।
রাজ্যের বিজ্ঞাপন বিরসাকে সাঁওতাল বিদ্রোহের ‘অমর শহিদ’ বলে অভিহিত করলেও ইতিহাস কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে। প্রথমত, বিরসা সাঁওতাল নন। ফলে সাঁওতাল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা। দ্বিতীয়ত, সাঁওতাল বিদ্রোহ আর মুন্ডা বিদ্রোহের সময়কালও এক নয়। ফলে হুল দিবসে বিরসাকে স্মরণ করার যুক্তি নেই। সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা ১৮৫৫-র ৩০ জুন আর শেষ ১৮৫৬-র জানুয়ারিতে। ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী, বিরসার জন্ম হয় সাঁওতাল বিদ্রোহের ২০ বছর পরে, ১৮৭৫ সালে। তাঁর নেতৃত্বে মুন্ডা বিদ্রোহের সময়কাল ১৮৯৯ থেকে ১৯০০ সাল।
স্বাভাবিক ভাবেই এ দিন ছেপে বেরনো এই সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
আদিবাসী সমাজের গড়ন নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন পশুপতিপ্রসাদ মাহাতো। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যারা মঙ্গলবার দিনভর হুল উৎসব উদযাপন করছি, তারা এই বিজ্ঞাপন দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছি।’’ তাঁর বক্তব্য, বিরসার আন্দোলন সিধো-কানহোর আন্দোলনের প্রায় অর্ধ শতক পরের ঘটনা। দু’টোকে এক পংক্তিতে আনা কোনও ভাবেই উচিত নয়। পশুপতিবাবু বলেন, ‘‘রাজ্যের বিজ্ঞাপন, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর নামে যখন বিজ্ঞাপন বেরোচ্ছে, সেখানে এ ধরনের ভুল অভিপ্রেত নয়।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস শিক্ষক কিংশুক চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বিরসা মুন্ডাকে সাঁওতাল বিদ্রোহের শহিদ বলে উল্লেখ করা হলে সেটা ইতিহাসের চোখে অবশ্যই ভুল। কিংশুকবাবুর কথায়, ‘‘সাঁওতাল বিদ্রোহ আর মুন্ডা বিদ্রোহের মধ্যে ৪৪ বছরের ফারাক। সময়কাল শুধু নয়, দু’টো বিদ্রোহের ক্ষেত্র, পরিপ্রেক্ষিত, লক্ষ্য, চরিত্র সবই আলাদা।’’ ইতিহাসবিদদের অনেকেরই মতে, সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল ‘দিকু’-দের বা সামগ্রিক ভাবে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে, যাদের মধ্যে ইংরেজ শাসক, উচ্চবর্ণের জমিদার, জোতদারেরা সকলেই ছিলেন। আর মুন্ডা বিদ্রোহের লক্ষ্য ছিল, ব্রিটিশ রাজের অবসান ঘটিয়ে মুন্ডা শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী ও আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি সুকুমার হাঁসদাকে এ দিন এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি আজ সারা দিন হুল দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত আছি। কোথায় কী বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে, সেটা না দেখে মন্তব্য করতে পারব না।’’
তবে মুখ্যমন্ত্রীর নামে বিজ্ঞাপনটি বেরোলেও সেটি দিয়েছে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। সেই দফতরের সচিব ও আধিকারিকেরা এই ভুল করলেন কী ভাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রসঙ্গত ‘ডহরবাবু’ অধ্যায়ে বেশ কয়েক জন সচিব, আধিকারিক বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ভুল শুধরে দিতে গিয়ে চাকরিটা খোয়াই আর কী!’’ কিন্তু এ বার বিজ্ঞাপনের ভুল নিয়ে আঙুল প্রাথমিক ভাবে উঠেছে সচিব ও অন্য অফিসারদের দিকেই। তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে এ দিন বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস-এরও উত্তর দেননি। বিরোধীদের বক্তব্য, এমন ভুল একেবারেই অভিপ্রেত নয়। কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার অভিযোগ, ‘‘এটা বিপজ্জনক ভাবে ইতিহাসের বিকৃতি।’’ আর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, ‘‘যে মুখ্যমন্ত্রী হুল দিবসে ডহরবাবুকে খুঁজতে শুরু করেছিলেন, তাঁর সরকারের কাছে এমন বিজ্ঞাপন অপ্রত্যাশিত নয়।’’
http://www.anandabazar.com/state/mamata-makes-ridiculous-howler-again-describes-birsa-a-santal-rebel-1.168462
0 comments:
Post a Comment