Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

‘জমি যে সাঁওতালদের, কোনো সন্দেহ নেই’

গোলাম মর্তুজা | আপডেট:  
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারাকাত গত রোববার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল-অধ্যুষিত অঞ্চল ঘুরে এসেছেন। কী দেখেছেন, কী জেনেছেন, তা জানতে চাওয়া হলে গতকাল সোমবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জমি যে সাঁওতালদের, কোনো সন্দেহ নেই।’

রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ এলাকার সাঁওতাল-অধ্যুষিত মাদারপুর ও জয়পুর গ্রামে পুলিশ ও চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন সাঁওতাল নিহত হয়েছেন। আতঙ্ক রয়েছে সাঁওতালপল্লিতে। তাঁদের অভয় দিতে, মনের শঙ্কা দূর করতে পাশে দাঁড়াচ্ছেন অনেকেই।

অধ্যাপক আবুল বারাকাত ওই সংঘর্ষ ও সংঘর্ষ-পরবর্তী বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রংপুর চিনিকলের যে জমি নিয়ে এই সংঘর্ষ, সেটার দলিল ও পুরোনো কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি। সেগুলো পর্যালোচনা করে তিনি দাবি করেন, ‘জমি যে সাঁওতালদের, কোনো সন্দেহ নেই। কাগজে দেখা যায়, ১৯৬২ সালের ৭ জুলাই একটি চুক্তির মাধ্যমে চার মৌজার ১৮৪২ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। চুক্তিপত্রের ৫ ধারায় বলা আছে, চিনিকল ও আখ চাষের জন্য এ জমি নেওয়া হলো। যদি কখনো এ জমিতে এ ছাড়া (আখ চাষ ছাড়া) অন্য কিছু হয়, তাহলে এটা মূল মালিকদের ফেরত দেওয়া হবে।’ এ অবস্থায় প্রশ্ন এসে যায়, জমির মূল মালিক তাহলে কারা? এ ব্যাপারে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘১৯৪০ সালের আরএস রেকর্ড অনুযায়ী, এই জমির মালিক মূলত সাঁওতালরা; এর সঙ্গে কিছু কোল ও ওঁরাও জনগোষ্ঠীর জমিও আছে। ১৯৬২ সালে জমির যে সীমানা নির্ধারণ (ডিমারকেশন) করা হলো, সেখানে বলা আছে কোন জমি কার। মালিকদের অধিকাংশের নামই সরেন, টুডু, মুন্ডা ইত্যাদি; এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের বাবা-দাদারা হয়তো। অধিগ্রহণের প্রায় ৪০ বছর পর ২০০২ সালে একবার এবং ২০০৪ সালে চিনিকলটি সাময়িক বন্ধ (লে অফ) ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে আখ চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এখন চুক্তিপত্রের ৫ ধারা অনুযায়ী, জমি আদিবাসীদের কাছে যাওয়ার কথা। কিন্তু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীকে নামে-বেনামে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বিঘাপ্রতি দরে এই জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। আমি হিসাব করে দেখেছি, এই ইজারা থেকে শত কোটি টাকার বেশি আদায় হয়েছে। এ টাকাটাও কিন্তু আদিবাসীদেরই প্রাপ্য।’
জমি অধিগ্রহণের সময় এই আদিবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল—এমন তথ্য তিনি কোনো কাগজপত্রে পাননি বলেও দাবি করেন।
অধ্যাপক বারাকাত বলেন, ‘কারখানা-মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২০০২ সালের দিকে সাঁওতালরা আন্দোলন শুরু করে। ২০১৪ সালে জমি উদ্ধার কমিটি করা হয়, নাম: সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম জমি উদ্ধার কমিটি। এ জমি যে সাঁওতালদেরই, তার আরেকটি প্রমাণ হলো বাগদা ফার্ম বলে যে জায়গাটার নাম, তা হয়েছে বাগদা নামের এক সাঁওতাল আদিবাসীর নামে।’
আবুল বারাকাত বলেন, সাঁওতালপল্লিতে গিয়ে তিনি সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে জানতে চেয়েছেন যে তাঁরা কী চান? তাঁরা বলেছেন, জমি চান। এরপর যখন তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হলো, ‘জীবন বড়, না জমি বড়?’ তাঁরা বলেছেন, এই জমি বাবা-দাদার। তাঁরা সেগুলো ফেরত চান। তিনি আরও বলেন, ১৯৬২ সালে এখান থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর জমির মালিকদের অনেকে অন্যত্র ঠাঁই নেন। রাজশাহী, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা বাস করতে শুরু করেন। জমি ফেরত পাওয়ার প্রসঙ্গ আসার পরে সেই মানুষগুলো এখানে আসছেন। এখন আক্রান্ত হওয়ার পরও তাঁদের মামলা নেওয়া হচ্ছে না। আরেকটা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোট জমির ১০ ভাগের মতো অংশে আখ চাষ হচ্ছে। তবে সেটা রংপুর সুগার মিলের জন্য না, জয়পুরহাট সুগার মিলের জন্য।

Source: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1021307/%E2%80%98%E0%A6%9C%E0%A6%AE%E0%A6%BF-%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%93%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B9-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%87%E2%80%99
 
 
Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment