Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

চিনি শিল্প রক্ষায় কি রংপুরে ভূমি দখল জরুরি?

মোশাহিদা সুলতানা ঋতু | ০০:০০:০০ মিনিট, নভেম্বর ২০, ২০১৬
২০০৪ সালে রংপুর (মহিমাগঞ্জ) চিনিকল যখন বন্ধ হয়ে যায়, সেই একই বছর আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে, যা না বুঝলে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে ৬ নভেম্বর পাঁচটি গ্রামের ঘর পুড়িয়ে দেয়া, পুলিশের গুলিবর্ষণ ও ভূমিবঞ্চিত কৃষকদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। সেই একই বছর থেকে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি বেসরকারি চিনি রিফাইনারি র-সুগার আমদানি করে এবং তা পরিশোধন করে সাদা চিনি উৎপাদনে আসে। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলো বেসরকারি চিনি রিফাইনারির উপস্থিতিতে নতুন করে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। আর তখনই রুগ্ণ রংপুর চিনিকল টিকতে না পেরে মিল বন্ধ করে দেয়। চিনির স্থানীয় চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকে সবসময়ই আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। তবে এই আমদানি কখন কার দ্বারা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, তা প্রভাবিত করেছে বর্তমান চিনিকলগুলোর সাফল্যের সম্ভাবনাকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বাংলাদেশ পুষ্টি কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী মাথাপিছু বার্ষিক চিনির চাহিদা ৮ দশমিক ৫০ কেজি। সে হিসাবে বর্তমানে দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ টন বলে মনে করা হয় (বিএসএফআইসি, ২০১৪)। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলো চিনি উৎপাদন করেছে ৭৭ হাজার ৪৫০ টন। আর এদিকে পাঁচটি বেসরকারি রিফাইনারি প্রতি বছর উৎপাদন করতে পারে প্রায় ৩২ লাখ টন চিনি। এ রিফাইনারিগুলোর আমদানিকৃত চিনি পরিশোধনের ক্ষমতা বার্ষিক চাহিদার তুলনায় বেশি হওয়ায় রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলোকে এই বেসরকারি রিফাইনারিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রতি বছর রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়।
প্রতিযোগিতা যদি অসম না হতো তাহলে এ থেকে অবশ্যই ভোক্তারা সুফল পেত। কিন্তু দেখা গেল আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মূল্য কম থাকা সত্ত্বেও এই বেসরকারি রিফাইনারিগুলো বাজারে চড়া দামে আবার কখনো নিজেদের প্রয়োজনেই দেশী চিনির দামের চেয়েও কম দামে বিক্রি করছে। বাজারের সিংহভাগ বেসরকারি রিফাইনারিদের দখলে থাকায় এই মূল্য কমা-বাড়ার নিয়ন্ত্রণ এখন চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার হাতে খুব বেশি নেই। আর এদিকে যখন রিফাইনারিগুলো কম দামে চিনি বিক্রি করেছে, তখন রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলো লোকসান দিয়ে কম দামে চিনি বিক্রি করেছে এবং অনেক চিনিকলে অবিক্রীত চিনি নষ্ট হয়েছে। আবার যখন বাজারমূল্য অনেক উপরে উঠে গেছে, তখনো রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলোকে নির্ধারিত দামেই চিনি বিক্রি করতে হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলোকে একটা অসম প্রতিযোগিতার মুখে ঠেলে দিয়ে যথেষ্ট প্রণোদনা ছাড়া উৎপাদন খরচ বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রতিনিয়ত উঠে দাঁড়ানোর জন্য চাপ দেয়া হয়েছে। কখনো কখনো ট্যারিফ কমিশন থেকে, কখনো কখনো অর্থমন্ত্রী নিজেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এগুলো বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। অথচ কীভাবে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে মিলগুলোর ব্যবস্থাপনা যুগোপযোগী করা যায়, সে ব্যাপারে যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশের চিনিকলগুলোয় সরাসরি ১৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। আর আখ চাষের ওপর নির্ভর করে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ লাখ চাষীসহ প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবিকা। কৃষিভিত্তিক চিনি শিল্পকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ এলাকায় রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, ব্যাংক, হাটবাজার, অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। চিনির উপজাত চিটাগুড়, আখের ছোবড়া ইত্যাদি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেও বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে, যার মাধ্যমে বহু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এত বড় একটি শিল্প খাত শুধু অব্যবস্থাপনা ও সরকারের অমনোযোগের কারণে দিনে দিনে আরো দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ ব্যবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন আনলেই এবং রাষ্ট্রীয় সহায়তা পেলেই শিল্প খাতটি দেশের অর্থনীতিতে আরো অনেক অবদান রাখতে পারত। একদিক থেকে কর্মসংস্থান তৈরি, অন্যদিক থেকে ভোক্তাদের কাছে চিনি কম দামে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হতো। এমনকি ভূমিবঞ্চিত প্রান্তিক গোষ্ঠীর ভূমি অধিকারও সংরক্ষণ করা যেত। কীভাবে তা সম্ভব, সেই আলোচনাটিই এখানে করব।
দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে মাত্র পাঁচটির নিজস্ব বড় বাণিজ্যিক খামার আছে। আর বাকি ১০টি চিনিকল খামারের বাইরের কৃষকদের ওপরই নির্ভর করে ইক্ষু সরবরাহের জন্য। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম রংপুর চিনিকলের ১ হাজার ৮৪২ দশমিক ৩ একর আয়তনের একটি খামার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রংপুর চিনিকলে যে চিনি উৎপাদন হয়, তার জন্য মোট ৭ হাজার ৪০ একর জমিতে ইক্ষু চাষ হয়। এর মধ্যে ৭৭০ একর জমি ছিল সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের। অর্থাৎ বাকি ৬ হাজার ২৭০ একর জমি ছিল খামারের বাইরের কৃষকের। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মে ২০০৯-১০ অর্থবছরে মাত্র ২১৮ একর, ২০১০-১১তে ২২৪ একর জমিতে ইক্ষু আবাদ হয়। সেই বছরগুলোয় ১ হাজার ৮৪২ একর জমির মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৬০০ একরে ইক্ষু আবাদ হয়নি (সূত্র: রংপুর চিনিকল কার্যসম্পাদনী প্রতিবেদন ২০১৩-২০১৪)। ১৯৫৪ সালে চিনিকলের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়, তখন নিজস্ব বাণিজ্যিক খামার তৈরির পেছনে কারণ দেখানো হয়েছিল যে, নিজস্ব খামার থাকলে ইক্ষু সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, মিলের খামারের বাইরের জমিতে চাষ হওয়া ইক্ষুর ওপরই রংপুর চিনিকল বেশি নির্ভরশীল।
অন্যদিকে ২০১৪-১৫ সালে চিনি উৎপাদনে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে যেসব চিনিকল, তার মধ্যে রয়েছে সেতাবগঞ্জ চিনিকল (২৩২৭ টন) ও রংপুর চিনিকল (২৪৪০ টন)। এ দুটি চিনিকলেরই বড় খামার রয়েছে। মোট চিনি উৎপাদনে এগিয়ে থাকা ১৩টি চিনিকলের মধ্যে যে ১০টির উৎপাদন ৪ হাজার টনের ওপরে, সেগুলোর মাত্র তিনটি (কেরু, নর্থবেঙ্গল সুগার মিল, ঠাকুরগাঁও) বড় বাণিজ্যিক ফার্ম রয়েছে (সূত্র: বিএসএফআইসি বাজেট ২০১৫-১৬)। শুধু তা-ই নয়, ২০০৭-০৮ সালে মিলটি পুনরায় চালু হওয়ার পর থেকেও প্রায় প্রতি বছরই রংপুর চিনিকল অন্য ১৪টি চিনিকলের উৎপাদনের সঙ্গে তুলনা করলে সর্বনিম্ন উৎপাদন করেছে। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, খামারের মালিকানার সঙ্গে চিনি উৎপাদন বৃদ্ধির আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কিনা। অর্থাৎ চিনি উৎপাদন কম হওয়ার পেছনে আরো কারণ রয়েছে। চিনি শিল্পের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে হলে সেই কারণগুলোর দিকে অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে। সাঁওতাল ও দরিদ্র বাঙালিদের জমি দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করা হচ্ছে— এমন চিন্তা করার আগে এ বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা জানতে হবে।
এবার একটি মৌলিক প্রশ্নে আসা যাক। এত জমি থাকতেও কেন আখ চাষ না করে চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা অন্য ফসল চাষে জমি ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? যে কারণগুলো দেখানো হয়, তার মধ্যে প্রথমটি হলো— ইক্ষু চাষের জমির উর্বরা শক্তি রক্ষার জন্য এক বছর পর পর ইক্ষুর পরিবর্তে অন্য ফসল চাষ করার রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু এর আগে আমরা দেখেছি, এটাই যদি একমাত্র কারণ হতো তাহলে ২০০৯-১১ সালে খামারের মাত্র ১৫ শতাংশ জমিতে ইক্ষু চাষ না হয়ে আরো বেশি জমিতে চাষ হতে পারত। এছাড়া আমরা জানি, তামাক চাষ করলে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পায়। ইক্ষু চাষে জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিই যদি লক্ষ্য হয়, তাহলে সেই জমিতে তামাক চাষ করার অনুমতি কেন দেয়া হবে? দ্বিতীয় কারণটি দেখানো হয়, ইক্ষু চাষ কম লাভজনক বলে কৃষকরা ইক্ষু চাষ করতে আগ্রহী নন। কিন্তু এর সমাধান হিসেবে যদি জমি ইজারা দিয়ে অন্য ফসল উৎপাদন করা হয়, তাহলে কি চিনি শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব? নাকি চিনি শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারের প্রয়োজন ইক্ষু চাষে প্রণোদনা দেয়া? এ প্রসঙ্গে সত্তর দশকের বাস্তবতা ফিরে দেখা প্রাসঙ্গিক।
সত্তর দশকের শেষ বছরে ২৫ নভেম্বর এক তরুণ ইক্ষুচাষী পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার কার্যকারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ দেখেছিলেন, ইক্ষুচাষীরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, ইক্ষু বিক্রি করতে গিয়ে নানাভাবে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হয়ে ইক্ষু উৎপাদনে নিরুত্সাহিত হচ্ছেন এবং কারখানায় ইক্ষু বিক্রির বদলে গুড় উৎপাদনকারীর কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন, রাষ্ট্র ইক্ষুচাষীকে প্রণোদনার মাধ্যমে আকর্ষণ করার বদলে গুড় নিয়ন্ত্রণ আইন, পুলিশি নির্যাতন ও গুলি চালিয়ে পর্যন্ত ইক্ষু বিক্রি করতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছে (সূত্র: আখ কাহিনী, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ১৯৮০)। এর পর থেকে গত ৩৫ বছরে ইক্ষুচাষীদের সমস্যার সমাধান হয়নি, বরং নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ২০১৬-এর ফেব্রুয়ারিতে সর্বজনকথায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের জন্য চিনি শিল্পের উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাগত সংকটের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমি ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা দেখেছিলাম, কৃষকদের অনীহার কারণে ইক্ষু চাষ কমে যাওয়া চিনি উৎপাদন তথা উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও উৎপাদন খরচ কমানোর একটি বড় অন্তরায়। গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে, চিনিকলের কাছ থেকে ইক্ষু চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সার/কীটনাশক/বীজ সংগ্রহ করতে হলে কৃষককে প্রায় ১১ শতাংশ সুদ প্রদান করতে হয়। এগুলো সময়মতো পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না, বেশি দামে কিনতে হয় এবং অনেক সময় ওজনে কম দেয়া হয় বলে চাষীরা অভিযোগ করেন। বিক্রির টাকা আদায় করার জন্য কৃষককে মাসের পর মাস ধরনা দিতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চাষীর পক্ষে তিন থেকে ছয় মাস অপেক্ষা করার সুযোগ থাকে না, ফলে তাকে দালালদের কাছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লস দিয়ে পাওনার রশিদ বিক্রি করে দিতে হয়। চিনিকলের দৈনিক মাড়াইক্ষমতা নির্দিষ্ট হওয়ার কারণে কোন চাষীর কাছ থেকে কবে আখ কেনা হবে তার একটা পারমিট বা পুর্জি দেয়া হয় চাষীকে। জমিতে ইক্ষু পরিপক্ব হওয়ার পরও সময়মতো পুর্জি পাওয়া যায় না। আবার পুর্জি পাওয়ার পর ক্ষেত থেকে ইক্ষু চিনিকলে বা চিনিকলের ক্রয়কেন্দ্রে পরিবহন করতে গিয়ে সময়মতো ট্রাক বা ট্রাক্টর ভাড়া পাওয়া যায় না। এছাড়া ক্রয়কেন্দ্রে চাষীকে আখের ওজন কম দেয়ার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। চিনি শিল্প উন্নয়ন যদি সত্যিই লক্ষ্য হতো তাহলে ইক্ষু চাষে প্রতিবন্ধকতা দূর না করে, কৃষকদের ইক্ষু চাষে প্রণোদনা না দিয়ে কেন নির্বিচারে সাঁওতালদের ওপর গুলি করা হলো?
এখন দেখা যাক যে জমি নিয়ে এত কথা, সে জমি থেকে রংপুর চিনিকলের আয় কত। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রংপুর চিনিকলের মোট আয় ছিল ১০ কোটি টাকা, এর মধ্যে খামারের আয় ছিল প্রায় ১ দশমিক ৩ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫-এর সংশোধিত বাজেটে আয় দেখানো আছে ১০ কোটি টাকা, কিন্তু খামারের আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ টাকা। রাষ্ট্র কি তবে মাত্র ৫০ লাখ টাকা আয় করার জন্য দিনের পর দিন মানুষকে তাদের জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নীতিকে সমর্থন করে যাচ্ছে? এই বিশাল আয়তনের জমি সারা বছর আবাদ করলে কত গুণ বেশি আয় হতে পারে এবং সেই আয় এখন কাদের ঘরে যাচ্ছে, তা প্রশ্নের দাবি রাখে।
ধরে নিলাম উল্লিখিত যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে সাঁওতাল ও বাঙালিদের জমি তাদের ফেরত দেয়া হলো। পাশাপাশি সরকার ইক্ষু চাষের ফলন বৃদ্ধির দায়িত্ব কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দিয়ে দিল। নিয়মিত বীজ সরবরাহ, সার ও বীজ ক্রয়ে প্রণোদনা এবং কৃষকদের সময়মতো পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করা হলো। আমরা জানি, ইক্ষু আহরণের পর মিলে যত দেরিতে সরবরাহ করা হয়, তত সুক্রোজের পরিমাণ কমতে থাকে এবং বেশি ইক্ষু থেকে কম চিনি উৎপাদন হয়। ধরলাম কৃষি মন্ত্রণালয় এমন বীজ সরবরাহ করল, যাতে প্রতি ১০০ কেজি ইক্ষু থেকে ৬ কেজি চিনি উৎপাদন না করে ১০-১২ কেজি চিনি উৎপাদন করা যায় এবং ধরলাম পরিবহন ব্যবস্থা এমনভাবে পুনর্বিন্যাস করা হলো যে, ইক্ষু আহরণের পর কৃষকদের মিলে সরবরাহ করতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না, সুক্রোজের মাত্রা দেরি করার কারণে হ্রাস পায় না। ধরলাম বিতরণ ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করা হলো। এবং ধরলাম মানুষ জেনে গেল রিফাইন করা সাদা চিনির চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোয় লাল চিনির অধিক কদরের কারণ এটা অধিক স্বাস্থ্যকর এবং সাশ্রয়ী অর্থাৎ কম চিনিতে বেশি মিষ্টি হয়। এ সবকিছু যদি একসঙ্গে ঘটে তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে চিনিকলগুলো। তখন কৃষককে আখের দাম বেশি দিতে পারবে মিলগুলো। কৃষকরা খুশি হয়ে নিজের গরজেই আখ উৎপাদন করবেন। ১৮৪২ একর জমি ফিরে পেয়ে সাঁওতাল ও বাঙালিদের মুখে হাসি ফুটে উঠবে। হাসিমুখে কৃষকরা ফলন বাড়িয়ে দেবেন।
রাষ্ট্র উদ্যোগী হয়ে উঠলে চিনিকলগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনেই বেশি লাভ করতে পারবে এবং তখন বাজারে বেসরকারি চিনি রিফাইনারিগুলোর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। অর্থমন্ত্রী ভুলেও চিনিকল বন্ধ করার কথা মুখে আনবেন না। স্পেশাল ইকোনমিক জোন? চিনিকলগুলোই তো তৈরি হয়ে থাকা স্পেশাল ইকোনমিক জোন। কী দরকার এমন শিল্পকে ধ্বংস করার?
এখন প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্র এসব না করে কেন সাঁওতালদের ওপর গুলি চালাল? সারা বাংলাদেশে যে ১৩ লাখ একর জমি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে, তাদের উচ্ছেদ করতে কখনো পুলিশ গুলি করেছিল কি? তাহলে কেন এই নিরীহ মানুষের ওপর এ বর্বরতা যখন মিলের নিজস্ব জমি থাকা না-থাকার সঙ্গে উৎপাদন সম্পর্কিত নয়? 

লেখক: শিক্ষক, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
http://bonikbarta.com/news/2016-11-20/95667/%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA-%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%B0%E0%A6%82%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%AE%E0%A6%BF-%E0%A6%A6%E0%A6%96%E0%A6%B2-%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%BF---/

Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment