Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

নব্বইয়ের দশক থেকে কমছে ‘শহুরে সাঁওতাল’

উদিসা ইসলাম ও দুলাল আব্দুল্লাহ১২:৪২, নভেম্বর ২৫, ২০১৬ 
এক সময় রজশাহী শহর জুড়েই স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতো সাঁওতাল পরিবারগুলো। নব্বইয়ের দশক থেকে তারা হারাতে শুরু করে ভিটে-মাটি। বাধ্য হয়েই শহর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নেয়। এ বিপর্যয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এখনও রাজশাহী মহানগরীতে টিকে থাকা কয়েকটি সাঁওতাল পরিবার।রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র মহিষবাথান এলাকায় একসময় শতাধিক সাঁওতাল পরিবার থাকতো। বর্তমানে সেখানে বারোটি পরিবার রয়েছে, যারা মোটামুটি শিক্ষিত।
‘আদিবাসী পল্লি’ নামে খ্যাত রাজশাহী শহরের মহিষবাথানের পশ্চিম পাড়া, বুলনপুর ও রাজবাড়িতে শত শত সাঁওতালের বাস ছিল। এদের সবাই বাঙালি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বুলনপুর মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে শুরু করেন। এরপর বিচিত্র কারণে কমতে থাকে সাঁওতাল পরিবারগুলোর সংখ্যা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,বর্তমানে সেখানে মাত্র ১২টি পরিবার আছে। এসব পরিবারের দাবি, মাদার তেরেসা মিশনারি প্রতিষ্ঠার জন্য তাদেরকে এখান থেকে চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তারা সুনির্দিষ্টভাবে কোনও তথ্য দিতে পারেননি এবং পাওয়া যায়নি কোনও বক্তব্য।
এ উচ্ছেদের পর তারা কী করে জীবিকা নির্বাহ করছেন জানতে চাইলে হেমব্রম নামে এক সাঁওতাল বলেন, ‘পেশা বলতে আমরা কেবল বুঝি কৃষিকাজ। গ্রামে সারাদিন কৃষিকাজ করে এসে শহরে থাকতাম। সেটা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’
স্থানীয় বাম নেতাদেরও অনেকে এই ‘সাঁওতাল উচ্ছেদ’ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘শহরে যারা আছেন, তাদের পেশা হচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের রাস্তা ও ড্রেন পরিষ্কার করা।’
সাংস্কৃতিক জীবনে আমূল পরিবর্তনের কারণেই ভয়ঙ্কর টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে এসব সাঁওতাল পরিবারগুলোকে। কী ধরনের পরিবর্তন জানতে চাইলে সুলতা মণ্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে বিয়ে হলে সাতদিন ধরে উৎসব হতো। এখন কোনোমতে দেড়দিনে শেষ করে দিতে হয়। কারণ, ঢোল ও গান-বাজনা করলে আশেপাশের অন্য ধর্মের কাছ থেকে  অভিযোগ আসে।’ তবে তিনি এও জানান যে, ‘দুই দশক আগে বিয়ের সব কাজে মুসলিমরাই সব ধরনের সহযোগিতা করত।’
সুলতা মণ্ডলের দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে সেনাবাহিনী ও ছোট ছেলে এনজিওতে চাকরি করেন। তার স্বামী নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন, মারা গেছেন। আর মেয়ে দুটোর বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের স্বামীরা চাকরি করেন ঢাকায়।
তিনি বলেন, ‘৭৫ সাল থেকে এই এলাকায় যাতায়াত ছিল। ‘৮৩ সাল থেকে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস। প্রতিবেশী মুসলিম পরিবারের ভয়ে বাড়ির পেছন দিক প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলতে হয়েছে। কিন্তু যারা রাজশাহীর এই এলাকা দেখেছেন, তারা কোনও বাড়িতে আগে বেড়া দেখেছেন বলতে পারবেন না।’
এই পল্লির আরেকজন বাসিন্দা মমিন মারাণ্ডি বেকার হয়ে আছেন। তার স্ত্রী হাসপাতালে চাকরি করেন। তা দিয়ে সংসার চলে। সাংস্কৃতিক জীবনে কি ধরনের পরিবর্তন এসেছে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে আমার জন্ম হয়েছে। কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক জীবন আগের মতো নেই। আমাদের ভেতর ঐক্যর অভাব। কেউ কাউকে মানে না। একজন কেউ ভুল সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলেও সেটাকে সঠিক মনে করে থাকেন। আবার কেউ যদি ভুলটা ভাঙিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, তা গ্রহণ করতে চায় না। অথচ আগে আমাদের মধ্যে একজন মণ্ডল থাকতেন। তিনি যেটা বলতেন সেটাই সঠিক ভেবে সবাই মেনে নিত। আমাদের এই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণেই অন্যরা সুযোগ নেয়।’
আন্দ্রেস বিশ্বাস নামে আরেক সাঁওতাল বাংলা টিবিউনকে বলেন, ‘লোভ দেখিয়ে আমাদের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চল থেকে অনেককে গোবিন্দগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মিথ্যা বলে নিয়ে গেছে। ওখানকার ঘটনার পর থেকে রাজশাহী অঞ্চলের আদিবাসীরাও আতঙ্কে রয়েছি। আমাদের ওপর আবার কখন হামলা হয়, এই আতঙ্কে আছি।’
নৃবিজ্ঞান থেকে সম্প্রতি পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসরিন খন্দকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রান্তিকের একটা দিক অবশ্যই ভূমিকেন্দ্রিক। সাঁওতালরা বিভিন্নভাবে ভূমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে। রাজশাহী শহরের কাছে এমন এলাকা আছে, যেখানে এক সময় সাঁওতাল পরিবার ছিল, এখন নেই। আমাদের বইয়ের সংগৃহীত বয়ান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, স্থানীয় পর্যায়ে যারা ক্ষমতাবান তারাই সাঁওতালদের ভিটে-বাড়ির দিকে নজর দেয়। এরপর দখল করে ভুয়া মামলা দিয়ে বাপ-দাদার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছে।’
এ প্রক্রিয়াকে সংখ্যালঘিষ্ঠের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের বিস্তার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভূমির রাজনৈতিক সমাধান করা সবচেয়ে জরুরি।’

http://www.banglatribune.com/national/news/160165/%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%87%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%B6%E0%A6%95-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E2%80%98%E0%A6%B6%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%93%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E2%80%99

Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment