রিপন হাঁসদা
কোন বর্ণমালায় লেখা হবে সাঁওতালি ভাষা— রোমান, বাংলা না অলচিকি? এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ভার্চুয়াল জগতে তুমুল তর্ক-বিতর্ক চলছে। তথাকথিত গবেষকগণ ও কিছু বেসরকারি সংগঠন যাঁরা হয়তো সাঁওতালি ভাষার একটি বাক্য তো দূরের কথা একটি শব্দের সঠিক উচ্চারণ করতে পারেন কিনা সন্দেহ, তাঁরাই এই সাঁওতালি ভাষাকে বাংলা বর্ণমালায় লেখার পক্ষে কতিপয় খোঁড়া যুক্তিসহ দাবি ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তাঁরা এটা বলতেও দ্বিধাবোধ করেননি যে, যাঁরা রোমান লিপিতে সাঁওতালি ভাষা লেখার পক্ষে তাঁরা নাকি বাংলা ভাষার শত্রু। কী নির্মম মিথ্যাচার! তাঁদের যুক্তির একমাত্র অবলম্বন বাংলা যেহেতু এ দেশের রাষ্ট্রভাষা, তাই শুধু সাঁওতালি কেন এ দেশে বসবাসকারী তাবত্ আদিবাসীদের ভাষা বাংলা বর্ণমালায় লেখা হোক; এতে ভাষাটির আসল উচ্চারণ আসুক অথবা না আসুক এতে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু হাস্যকর ও অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় তাঁরা কেউই সাঁওতালি ভাষার উচ্চারণ সম্পর্কে মুখ খুলতে চাননি বা খুলতে গিয়েও পুনরায় বন্ধ করেছেন। তাঁরা হয়তো ভুলে গিয়ে থাকবেন যে, একটি ভাষা যে কোনো বর্ণমালায় লিখলেই হয় না বরং মুখ্য বিষয় হচ্ছে ঐ লিপিতে ভাষাটির শুদ্ধ ও আসল উচ্চারণ সম্ভব কিনা।
সাঁওতালি ভাষার জন্ম ঠিক কবে হয়েছিল তা প্রত্নতাত্ত্বিকদের ভাববার বিষয়; তবে সাঁওতালি যে সমৃদ্ধ ও প্রাচীনতম ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাঁওতালি ভাষা অনেক প্রাচীন ও সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এ ভাষার কোনো লিখিত রূপ ছিল না পরে পণ্ডিত রুঘুনাথ মুর্মু সাঁওতালি ভাষার বর্ণমালা 'অলচিকি' আবিস্কার করেন (১৯২৫)। এ ভাষায় রচিত গল্প, ছড়া, কবিতা, গান, রূপকথা ইত্যাদি সুদূর প্রাচীনকাল থেকে মুখে মুখেই প্রচলিত হয়ে আসছে। কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় মুখে মুখে প্রচলিত হওয়া সত্ত্বেও এ ভাষার কোনো শব্দ বা বাক্য গঠনের চিরায়ত নিয়মের এবং উচ্চারণশৈলীর কোনো পরিবর্তন হয়নি। ব্রিটিশ শাসনামলে মিশনারিগণ সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের নিমিত্ত রোমান লিপিতে সাঁওতালি ভাষার লিখিত রূপ দেয়ার চেষ্টা করেন। প্রথম দিকে কিছু শব্দের উচ্চারণগত অসঙ্গতি দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে তা সংশোধনের মাধ্যমে উচ্চারণ জটিলতা পুরোপুরি দূর হয়। এবং সাঁওতালি ভাষা তার লিখিত রূপ লাভের ফলে যোগাযোগ ও সাহিত্যচর্চাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো সমৃদ্ধ হতে থাকে যার প্রক্রিয়া আজও চলমান। এ থেকেই সাঁওতালি ভাষা বিকাশে মিশনারিদের অবদান সহজে অনুমেয়, যা সচেতন সাঁওতাল জনগোষ্ঠী কখনোই অস্বীকার করতে পারে না। যে লিপিতে সাঁওতাল ভাষা তার প্রথম লিখিত রূপ পেয়েছিল তা আজ বহু বছর পরে অস্বীকার করার বা বাদ দেয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। নির্দ্বিধায় বলা যায়, রোমান লিপিতে সাঁওতালি ভাষার উচ্চারণসহ অন্যান্য জটিলতা না থাকায় সাঁওতাল জনগণ তা সানন্দে গ্রহণ করেছিল এবং আজও তারা তা প্রাণে আঁকড়ে লালন করে। যাঁরা সাঁওতালি ভাষা সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর রাখেন না বা এ ভাষার বিশালতা সম্পর্কে যাঁদের ন্যূনতম ধারণা নেই তাঁরা আজ রোমান লিপিতে সাঁওতালি ভাষা লেখার বিরোধী। যদিও সাঁওতালি ভাষার গৌরবময় ইতিহাস থেকে শুরু করে এ ভাষার গ্রামার, গল্প, গান, অভিধান ইত্যাদি সবই রোমান হরফে লিপিবদ্ধ। তাঁরা যদি আজ সাঁওতালদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য বা শব্দ পুনরুদ্ধার করতে চান বা সাঁওতালদের সম্পর্কে স্টাডি করতে চান তাঁদের রোমান ভাষায় লিখিত বইসমূহ থেকে জ্ঞানার্জন ছাড়া কোনো উপায় নেই।
পাকিস্তানি আমলে তত্কালীন কিছু বাঙালির মতো এখনকার তথাকথিত নীতিনির্ধারকদের যদি সামান্যতম গোঁড়ামিও না থাকতো, তবে তাঁরা আজ এক বাক্যেই রোমান লিপিতে সাঁওতালি ভাষা লেখার পক্ষে মত না দিলেও অন্তত বিরোধিতা করার দুঃসাহস দেখাতেন না। কিন্তু হায়! তাঁরা আজ রোমান লিপির মধ্যে খ্রিস্টধর্মের গন্ধ পান। কিন্তু তাঁরা এ কথা হয়তো জানেন যে, কোনো লিপি বা বর্ণমালা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের ঐতিহ্য বহন করলেও ধর্মের পরিচয় বহন করে না; করলে মুসলিম দেশসমূহে রোমান লিপি কোনোক্রমেই ঠাঁই পেতো না। অথচ এই খ্রিস্টান মিশনারিদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় যে সাঁওতালি ভাষা তার প্রথম লিখিত রূপ পেয়েছিল সে কথা তাঁরা বেমালুম ভুলে যান।
অথচ খ্রিস্টধর্ম সাঁওতাল সংস্কৃতির সঙ্গে কখনোই সাংঘর্ষিক ছিল না বরং অনেক ক্ষেত্রে তা সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তার চাক্ষুষ প্রমাণ— সাঁওতালদের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান, সাহিত্যচর্চা, আচার-ব্যবহার, সমাজ কাঠামো, জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ সংক্রান্ত অনুষ্ঠানসহ যাবতীয় সামাজিক অনুষ্ঠানাদি সুদূর প্রাচীনকাল থেকে আজও অবিকৃতভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন জায়গায় যাঁরা বলেন যে, সাঁওতাল জনগোষ্ঠী তাদের ভাষা, সংস্কৃতি হারিয়েছে, তা সাঁওতালদের সম্পর্কে অপপ্রচার ও ডাহা মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর রোমান লিপির মধ্যে ধর্মের গন্ধ খোঁজা মূল্যবান সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। অবশ্য যাঁরা সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর প্রগতি,সভ্যতা ও পরিবর্তনকে ভালো চোখে দেখতে পারেন না তাঁরাই হয়তো এমন উদ্ভট কাজ করার প্রয়াস পান।
যাঁরা বাংলা বর্ণমালায় সাঁওতালি ভাষা লিখতে চান তাঁরা সাঁওতালি ভাষাকে গলা টিপে হত্যা করতে চান। উচ্চারণের অসঙ্গতি যে ভাষার মৃত্যু ঘটায় এ পাঠ তাঁরা হয়তো আজও পাননি। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যখন আন্দোলন চলছিল তখন তত্কালীন শাসকগোষ্ঠী ছাড়াও কিছু গোঁড়া বাঙালি বাংলাকে আরবি হরফে লেখার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু ছাত্রসমাজ ও বুদ্ধিজীবী কেউ এ কূপমণ্ডুক সিদ্ধান্ত মেনে নেননি। কেননা বাংলা ভাষার উচ্চারণ আরবি হরফে কখনোই প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ঠিক একইরকমভাবে সাঁওতালি ভাষার উচ্চারণ বাংলা হরফে প্রকাশ করা অসম্ভব।
সচেতন সাঁওতাল সমাজ, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী কেউই নিজ মাতৃভাষার অপমৃত্যু দেখতে চান না। রোমান ও বাংলা লিপি নিয়ে সাঁওতালদের মধ্যে কিঞ্চিত মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এর মূল হোতারা কিন্তু অসাঁওতালরাই, যাঁরা সাঁওতালদের সম্পর্কে বারবার ভুল তথ্য দিয়ে গোটা জাতিকে বিভ্রান্ত ও সাঁওতালদের খাটো করে আসছেন। আসুন আমরা সকলে মিলে তাঁদের বয়কট করি। তাঁরা হয়তো ভুলে যান যে, সাঁওতালরা কখনোই কোনো অন্যায়, অবিচার, ষড়যন্ত্র বা চাপিয়ে দেয়া কোনো নীতি গ্রহণ করে না। আর গ্রহণ করেনি বলেই সাঁওতালদের গৌরবময় সংস্কৃতি আজও টিকে আছে। ইংরেজদের নানা অপরাধ-অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র সংগ্রাম সাঁওতালরাই শুরু করেছিল এবং তার বহু বছর পর অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বোধোদয় হয় এবং ইংরেজদের বিতাড়িত করে। কিন্তু রোমান লিপি প্রতিষ্ঠার সময় এমন বিদ্রোহের খবর পাওয়া যায়নি।
আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম সরকারের অন্যতম মহত্ উদ্যোগ। কিন্তু মুখোশধারী কিছু ষড়যন্ত্রকারীর কারণে কোমলমতি শিশুরা মাতৃভাষায় সুখপাঠ লাভ করবে কিনা তাতে অনেকেই সন্দিহান। রোমান লিপি যেহেতু সাঁওতালি ভাষার সঠিক উচ্চারণ ও দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বহন করে তাই রোমান হরফই হোক সাঁওতালি ভাষার একমাত্র বর্ণমালা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সাঁওতালি ভাষার জন্ম ঠিক কবে হয়েছিল তা প্রত্নতাত্ত্বিকদের ভাববার বিষয়; তবে সাঁওতালি যে সমৃদ্ধ ও প্রাচীনতম ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাঁওতালি ভাষা অনেক প্রাচীন ও সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এ ভাষার কোনো লিখিত রূপ ছিল না পরে পণ্ডিত রুঘুনাথ মুর্মু সাঁওতালি ভাষার বর্ণমালা 'অলচিকি' আবিস্কার করেন (১৯২৫)। এ ভাষায় রচিত গল্প, ছড়া, কবিতা, গান, রূপকথা ইত্যাদি সুদূর প্রাচীনকাল থেকে মুখে মুখেই প্রচলিত হয়ে আসছে। কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় মুখে মুখে প্রচলিত হওয়া সত্ত্বেও এ ভাষার কোনো শব্দ বা বাক্য গঠনের চিরায়ত নিয়মের এবং উচ্চারণশৈলীর কোনো পরিবর্তন হয়নি। ব্রিটিশ শাসনামলে মিশনারিগণ সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের নিমিত্ত রোমান লিপিতে সাঁওতালি ভাষার লিখিত রূপ দেয়ার চেষ্টা করেন। প্রথম দিকে কিছু শব্দের উচ্চারণগত অসঙ্গতি দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে তা সংশোধনের মাধ্যমে উচ্চারণ জটিলতা পুরোপুরি দূর হয়। এবং সাঁওতালি ভাষা তার লিখিত রূপ লাভের ফলে যোগাযোগ ও সাহিত্যচর্চাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো সমৃদ্ধ হতে থাকে যার প্রক্রিয়া আজও চলমান। এ থেকেই সাঁওতালি ভাষা বিকাশে মিশনারিদের অবদান সহজে অনুমেয়, যা সচেতন সাঁওতাল জনগোষ্ঠী কখনোই অস্বীকার করতে পারে না। যে লিপিতে সাঁওতাল ভাষা তার প্রথম লিখিত রূপ পেয়েছিল তা আজ বহু বছর পরে অস্বীকার করার বা বাদ দেয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। নির্দ্বিধায় বলা যায়, রোমান লিপিতে সাঁওতালি ভাষার উচ্চারণসহ অন্যান্য জটিলতা না থাকায় সাঁওতাল জনগণ তা সানন্দে গ্রহণ করেছিল এবং আজও তারা তা প্রাণে আঁকড়ে লালন করে। যাঁরা সাঁওতালি ভাষা সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর রাখেন না বা এ ভাষার বিশালতা সম্পর্কে যাঁদের ন্যূনতম ধারণা নেই তাঁরা আজ রোমান লিপিতে সাঁওতালি ভাষা লেখার বিরোধী। যদিও সাঁওতালি ভাষার গৌরবময় ইতিহাস থেকে শুরু করে এ ভাষার গ্রামার, গল্প, গান, অভিধান ইত্যাদি সবই রোমান হরফে লিপিবদ্ধ। তাঁরা যদি আজ সাঁওতালদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য বা শব্দ পুনরুদ্ধার করতে চান বা সাঁওতালদের সম্পর্কে স্টাডি করতে চান তাঁদের রোমান ভাষায় লিখিত বইসমূহ থেকে জ্ঞানার্জন ছাড়া কোনো উপায় নেই।
পাকিস্তানি আমলে তত্কালীন কিছু বাঙালির মতো এখনকার তথাকথিত নীতিনির্ধারকদের যদি সামান্যতম গোঁড়ামিও না থাকতো, তবে তাঁরা আজ এক বাক্যেই রোমান লিপিতে সাঁওতালি ভাষা লেখার পক্ষে মত না দিলেও অন্তত বিরোধিতা করার দুঃসাহস দেখাতেন না। কিন্তু হায়! তাঁরা আজ রোমান লিপির মধ্যে খ্রিস্টধর্মের গন্ধ পান। কিন্তু তাঁরা এ কথা হয়তো জানেন যে, কোনো লিপি বা বর্ণমালা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের ঐতিহ্য বহন করলেও ধর্মের পরিচয় বহন করে না; করলে মুসলিম দেশসমূহে রোমান লিপি কোনোক্রমেই ঠাঁই পেতো না। অথচ এই খ্রিস্টান মিশনারিদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় যে সাঁওতালি ভাষা তার প্রথম লিখিত রূপ পেয়েছিল সে কথা তাঁরা বেমালুম ভুলে যান।
অথচ খ্রিস্টধর্ম সাঁওতাল সংস্কৃতির সঙ্গে কখনোই সাংঘর্ষিক ছিল না বরং অনেক ক্ষেত্রে তা সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তার চাক্ষুষ প্রমাণ— সাঁওতালদের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান, সাহিত্যচর্চা, আচার-ব্যবহার, সমাজ কাঠামো, জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ সংক্রান্ত অনুষ্ঠানসহ যাবতীয় সামাজিক অনুষ্ঠানাদি সুদূর প্রাচীনকাল থেকে আজও অবিকৃতভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন জায়গায় যাঁরা বলেন যে, সাঁওতাল জনগোষ্ঠী তাদের ভাষা, সংস্কৃতি হারিয়েছে, তা সাঁওতালদের সম্পর্কে অপপ্রচার ও ডাহা মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর রোমান লিপির মধ্যে ধর্মের গন্ধ খোঁজা মূল্যবান সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। অবশ্য যাঁরা সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর প্রগতি,সভ্যতা ও পরিবর্তনকে ভালো চোখে দেখতে পারেন না তাঁরাই হয়তো এমন উদ্ভট কাজ করার প্রয়াস পান।
যাঁরা বাংলা বর্ণমালায় সাঁওতালি ভাষা লিখতে চান তাঁরা সাঁওতালি ভাষাকে গলা টিপে হত্যা করতে চান। উচ্চারণের অসঙ্গতি যে ভাষার মৃত্যু ঘটায় এ পাঠ তাঁরা হয়তো আজও পাননি। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যখন আন্দোলন চলছিল তখন তত্কালীন শাসকগোষ্ঠী ছাড়াও কিছু গোঁড়া বাঙালি বাংলাকে আরবি হরফে লেখার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু ছাত্রসমাজ ও বুদ্ধিজীবী কেউ এ কূপমণ্ডুক সিদ্ধান্ত মেনে নেননি। কেননা বাংলা ভাষার উচ্চারণ আরবি হরফে কখনোই প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ঠিক একইরকমভাবে সাঁওতালি ভাষার উচ্চারণ বাংলা হরফে প্রকাশ করা অসম্ভব।
সচেতন সাঁওতাল সমাজ, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী কেউই নিজ মাতৃভাষার অপমৃত্যু দেখতে চান না। রোমান ও বাংলা লিপি নিয়ে সাঁওতালদের মধ্যে কিঞ্চিত মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এর মূল হোতারা কিন্তু অসাঁওতালরাই, যাঁরা সাঁওতালদের সম্পর্কে বারবার ভুল তথ্য দিয়ে গোটা জাতিকে বিভ্রান্ত ও সাঁওতালদের খাটো করে আসছেন। আসুন আমরা সকলে মিলে তাঁদের বয়কট করি। তাঁরা হয়তো ভুলে যান যে, সাঁওতালরা কখনোই কোনো অন্যায়, অবিচার, ষড়যন্ত্র বা চাপিয়ে দেয়া কোনো নীতি গ্রহণ করে না। আর গ্রহণ করেনি বলেই সাঁওতালদের গৌরবময় সংস্কৃতি আজও টিকে আছে। ইংরেজদের নানা অপরাধ-অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র সংগ্রাম সাঁওতালরাই শুরু করেছিল এবং তার বহু বছর পর অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বোধোদয় হয় এবং ইংরেজদের বিতাড়িত করে। কিন্তু রোমান লিপি প্রতিষ্ঠার সময় এমন বিদ্রোহের খবর পাওয়া যায়নি।
আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম সরকারের অন্যতম মহত্ উদ্যোগ। কিন্তু মুখোশধারী কিছু ষড়যন্ত্রকারীর কারণে কোমলমতি শিশুরা মাতৃভাষায় সুখপাঠ লাভ করবে কিনা তাতে অনেকেই সন্দিহান। রোমান লিপি যেহেতু সাঁওতালি ভাষার সঠিক উচ্চারণ ও দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বহন করে তাই রোমান হরফই হোক সাঁওতালি ভাষার একমাত্র বর্ণমালা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
Source: http://ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDNfMDZfMTNfMV8xOF8xXzIzOTk1
**************************************************************************
0 comments:
Post a Comment