Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

দিনাজপুরে ভূমিদস্যুদের নির্যাতনে আদিবাসীরা দেশ ছাড়ছে

মাহবুবুল হক খান, দিনাজপুর: দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের সাওতাল আদিবাসী সংখ্যালঘুরা স্থানীয় ভূমিদস্যুদের নির্যাতনে বাড়ি-ভিটে রেখে দেশ ছেড়ে ৭টি পরিবার ভারতে পালিয়েছে। দু’একটি পরিবার বসবাস করলেও ভূমিদস্যুরা সারাণ তাদেরকে ভয়ভীতির মধ্যে রাখে। বর্তমানে তারা ভূমিদস্যুদের চাপে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ভূমিদস্যুরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া আদিবাসী সংখ্যালঘুদের জমি দখল করে ভোগদখল করছে। ওই গ্রামের আদিবাসী সংখ্যালঘুদের একমাত্র কবরস্থানটিও ভূমিদস্যুরা দখল করে কাটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেড়া দিয়ে চাষাবাদ করছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলরার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের অলিপুর মৌজার আদিবাসী সংখ্যালঘুদের ৭টি দাগের মোট ৭৮ একর জমি জবর দখল করে ভোগ করছে। আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দণি অলিপুর গ্রামের সাওতাল পাড়া গ্রামে এখন আর সাওতাল আদিবাসীদের দেখা মেলেনা। সাওতালপাড়া গ্রামের নামকরন হয়েছিলো গত কয়েক যুগ আগে। গত কয়েক বছর পূর্বে স্থানীয় কয়েকজন ভূমিদস্যুরা জমি-জমার জন্য গ্রামের সাওতাল আদিবাসীদের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন করে। ভূমিদস্যুদের নির্যাতন সইতে না পেরে ওই গ্রামের সব আদিবাসী পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
বর্তমানে বসবাসকারী একমাত্র পরিবারের অন্যতম সদস্য সাওতাল আদিবাসী মৃত বিষূ মার্ডীর কন্যা ও মৃত পল্টন হাজদার স্ত্রী জবা মার্ডী জানান, সাওতাল আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দারা একই এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে মোশারফ হোসেন, খতিব উদ্দিনের ছেলে খায়রুল ইসলাম, বগলু জর্ষির ছেলে মোবারক হোসেন, আবুল মহুরীরর ছেলে মহবুলসহ একটি ভূমিদস্যু দলের নির্যাতন-অত্যাচারে বাড়ি-ভিটে রেখে দেশ ছেড়ে সকলেই ভারতে চলে গেছে। ভারতে চলে যাওয়া পরিবার ও আমাদের জমিসহ এখানকার ভূমিদস্যুরা মোট ৭৮ একর জমি জবর দখল করে ভোগ করছে। আমাদের একমাত্র কবরস্থানটিও দখল করে নিয়েছে তারা। বর্তমানে আমাদের মৃত্যু হলে কবর দেওয়ার স্থান নেই।
তিনি আরো জানান, গত কয়েক মাস পূর্বে আমার মায়ের মৃত্যু হলে কবর দেয়ার স্থান পাওয়া য়ায়নি। বর্তমানে একমাত্র পরিবার আমরাই এই সাওতালপাড়ায় বসবাস করছি। কিন্তু প্রতিটি মুর্হুত যেন আতঙ্কে কাটাতে হয়। সব আদিবাসী পরিবারকে দেশ ছাড়া করেও শান্ত হয়নি এখানকার ভূমিদস্যুরা। গত মাসে আমার ছোট ছেলে সুনীলকে ভূমিদস্যুদের সদস্যরা হত্যার উদ্দেশ্যে অনত্র তুলে নিয়ে গাছে বেধে ব্যাপক নির্যাতন করে তাকে ছেড়ে দেয়। সৃষ্টিকর্তার  ইচ্ছায় সে প্রাণে বেচেঁ গেছে।
অশ্রুসজল চোখে তিনি অভিযোগ করেন, ভূমিদস্যুরা এখনও যদি কোন ধরনের দাবি দাওয়া করে তা পূরণ না করলে আমার ছেলেদের নিয়ে নির্যাতন করে। এ বিষয়ে কোথাও কোন ধরনের অভিযোগ দিলে পরদিন আমাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। আর কারো কাছে অভিযোগ করে কোন লাভ হয়না। অসংখ্যবার দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় অভিযোগ দিয়েছি। স্থানীয় প্রশাসনের কারো কাছেই অভিযোগ করে কোন আশ্রয় পাইনি। তাই মনের দুঃখে অনেক কথা বলেই ফেল্লাম দয়া করে এই ঘটনাগুলো প্রকাশ করবেন না। নইলে আবার আমাদের উপর নির্যাতন করবে। তবে আদিবাসীদের জমি ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য দিনাজপুর আদালতে জবা মার্ডি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে তিনি জানান।
দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়া রনা মার্ডির ছেলে জীবন মার্ডির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা অতি কষ্টে ও দুঃখে নিজের জন্মভূমি ছেড়ে ভারতে এসেছি। কেউ নিজের জন্মভূমি ছেড়ে যেতে চায় এই প্রশ্নটা আপনাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রশাসন ও সরকারকে করলাম। আমরা দেশ ছেড়েছি আশা করি আমাদের যে একটি পরিবার সেখানে বসবাস করছে তার প্রতি কোন ধরনের অন্যায় হতে দেবেনা বর্তমান সরকার।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর আদিবাসী সমিতির কর্মকর্তা ও ১নং ইউপির মহিলা সদস্য রানু বেগম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা জেনেছি খুব দ্রুত এর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানকার আদিবাসীদের উপর নির্যাতনকারীরা খুবই শক্তিশালী হওয়ায় প্রশাসনের কোথাও কোন ধরনের অভিযোগ করে ফল পাওয়া যাচ্ছেনা। তারপরও আমরা চেষ্ঠা চালিয়ে যাবো।
ভূমিদস্যুদের নির্যাতন বন্ধ ও জবর দখলকৃত সকল জমি-জমা দ্রুত ফিরে পেতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট অনুরোধ করেছে আদিবাসি সাওতালরা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ভূমিদস্যু খতিব উদ্দিনের ছেলে খায়রুল উদ্দিন ও আবুল মহুরীর ছেলে মহবুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, আমরা আদিবাসীদের কোন জমি দখল করিনি। আদিবাসীদের কবরস্থানের জায়গার বিষয়ে খায়রুল বলেন, কারা তাদের কবরস্থান ঘেড়া দিয়েছে তা জানিনা।
দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলতাফ হোসেন জানান, আমি যোগদানের পর আদিবাসীদের কোন ধরনের অভিযোগ পাইনি। তবে ইতিপূর্বে দিয়েছে কিনা তা জানিনা। তবে যদি কেউ অভিযোগ দেয় তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Source: http://ccnews24.com/2014/06/02/%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8/

Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment