Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

কুঁচেও একটি রপ্তানি পণ্য!

অনেকেই হয়তো কুঁচে চেনেন না। ভাবছেন, কুঁচে! এ আবার কী! কুঁচে দেখতে কিছুটা বাইন মাছের মতো, আবার কিছুটা চিকন সাপের মতোও বলে অনেকে হয়তো একে সাপ ভেবেও ভুল করতে পারেন। তবে মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ থেকে এই কুঁচে বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়। আর এর রপ্তানি প্রতিবছরই বাড়ছে।
বাংলাদেশ থেকে কুঁচে রপ্তানি করতে হলে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে মান সনদ নিতে হয়। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গেল ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ দেশ থেকে কুঁচে রপ্তানি হয়েছে সাত হাজার ১৫৭ টন। এর আগের বছর রপ্তানি হয় ছয় হাজার ৮১৭ টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে কুঁচে রপ্তানি হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭ টন। ২০১০-১১ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ২৯৫ টন। আর এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয় এক হাজার ৭৮২ টন।
আর রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এদেশ থেকে এক কোটি ৪৯ লাখ ৭৮ হাজার ডলারের কুঁচে রপ্তানি হয়েছে। আগের বছর এক কোটি নয় লাখ ২১ হাজার ডলারের কুঁচে রপ্তানি হয়েছিল। অর্থাৎ পরিমাণ এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন দুই দিক থেকেই প্রতিবছর কুঁচে রপ্তানির পরিসর বাড়ছে।
এই কুঁচের গন্তব্য তাহলে কোথায়? রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া কুঁচের একটি বড় অংশই যায় চীন, হংকং, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ায়। এর বাইরে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশেও কুঁচে রপ্তানি হয়। এসব দেশে এই কুঁচে খাওয়া হয়।
ইপিবি বলছে, বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছরে যত কুঁচে রপ্তানি হয়েছে তার ৯৫ শতাংশের বেশিই গেছে চীনে। দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে এক কোটি ৪১ লাখ ৬২ হাজার ডলারের কুঁচে। তিন লাখ ২৫ হাজার ডলারের কুঁচে রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এর পরই বেশি রপ্তানি হয়েছে হংকংয়ে, দুই লাখ ৭১ হাজার ডলারের। এর বাইরে বেশি পরিমাণে রপ্তানি হওয়া দেশের তালিকায় আছে দক্ষিণ কোরিয়া (৬৯ হাজার ডলার) এবং তাইওয়ান (৬৪ হাজার ডলার)।
এদেশ থেকে কুঁচে রপ্তানি করে থাকেন উত্তরার সেবা অ্যাকুয়া রিসোর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল আলম। তিনি ১৯৯৫ সালে কুঁচে রপ্তানি শুরু করেন। কাঁকড়া, কুঁচে রপ্তানির সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকার যদি একটু গুরুত্ব দেয় তাহলে হিমায়িত মাছের অন্যতম অনুষঙ্গে পরিণত হবে কাঁকড়া ও কুঁচে। এগুলো চিংড়ির মতোই সম্ভাবনাময়।
জানা গেছে, আশির দশকে এদেশ থেকে কুঁচে রপ্তানি শুরু হয়। প্রতিবছরই কুঁচে রপ্তানি বাড়তে থাকায় এখন সারা দেশেই কুঁচের চাহিদা বেড়েছে।
রপ্তানিকারকেরা সারা দেশ থেকেই এই কুঁচে সংগ্রহ করে থাকেন। তবে বিল ও হাওর এলাকা থেকেই এটি বেশি পাওয়া যায়। রপ্তানিকারকেরা জানান, বর্ষাকালে সুনামগঞ্জসহ সিলেট অঞ্চল, লাকসাম ও চাঁদপুর থেকে বেশি কুঁচে সংগ্রহ করেন তাঁরা। আর শীতকালে বেশি সংগৃহীত হয় গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, নড়াইল এবং উত্তরবঙ্গ থেকে।
জানা গেছে, কুঁচের বাজারমূল্য সব সময়ই ওঠানামা করে। রপ্তানিকারকেরা মাঠপর্যায় থেকে প্রতি কেজি কুঁচে কেনেন ১৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। শীতকালে কুঁচের দাম বর্ষাকালের চেয়ে বেশি থাকে। আর সংগৃহীত এই কুঁচে রপ্তানি হয় সাড়ে পাঁচ ডলার থেকে সাড়ে ছয় ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪২০ থেকে ৫০০ টাকা)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুঁচে রপ্তানিকারক তিনটি প্রতিষ্ঠান বলেছে, প্রতি সপ্তাহে দেশ থেকে ১৫০ থেকে ২০০ টন কুঁচে রপ্তানি হয়। কিন্তু এর বাইরেও প্রচুর পরিমাণে কুঁচে রপ্তানি হয়, যা সরকারের নজরে আসে না। বিষয়টি কীভাবে হয় জানতে চাইলে তাঁরা জানান, কুঁচে রপ্তানির আগে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে মান সনদ নিতে হয়। এখন কোনো রপ্তানিকারক ৫০ টনের মান সনদ নিল, কিন্তু রপ্তানি করল ১০০ টন। সে ক্ষেত্রে সরকারের অগোচরেই ৫০ টন কুঁচে রপ্তানি হয়ে গেল। আর ওই রপ্তানিকারকদের লাভ হলো, মান সনদ দেওয়ার বিপরীতে তখন অধিদপ্তরকে ফি দিতে হয় না।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রপ্তানিকারকদের এখান থেকে মান সনদ নিতে হয়। তারা যত পরিমাণ দেখায় তা-ই আমরা জানতে পারি। এর বেশি রপ্তানি করলে সেটা দেখার সুযোগ আমাদের নেই।’


Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment