আপডেট: ০০:৫৫, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের অধিকার
নিশ্চিত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতারা।
এই
গোষ্ঠীর নেতারা বলছেন, কথা ছিল ২০১৪ সালের মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ের
শিশুদের হাতে মাতৃভাষার বই দিয়ে চালু হবে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা।
কিন্তু ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পার হলেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক
বোর্ড (এনসিটিবি) পাঠ্যবই প্রণয়নের কাজ শেষ করতে পারেনি। কবে শেষ হবে সেই
নিশ্চয়তাও নেই।
এ বিষয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করলেন সমতলে আদিবাসীদের
বৃহত্তম সংগঠন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, সাংগঠনিক
সম্পাদক বিমল রাজোয়ার, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওঁরাওদের নেতা বঙ্গপাল কেরকেটা।
তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের অভাবে ২০১৪ সালের মধ্যে ক্ষুদ্র
নৃগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায় থেকে শিক্ষা কার্যক্রম
চালু হতে পারেনি। তাঁরা জানান, সমতলের ওঁরাও, মুন্ডা, মালো, মাহাতো
প্রভৃতি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য সাদরি এবং সাঁওতালদের জন্য সাঁওতালি ভাষার
পাঠ্যবই প্রণয়ন করার কথা এনসিটিবির।
সাদরি ভাষায় বই প্রণয়নের সঙ্গে
যুক্ত ওঁরাও নেতা বঙ্গপাল কেরকেটা ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সোনাদীঘি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যাণী মিনজু জানান, পাঠ্য বিষয়
প্রণয়ন বিষয়ে এনসিটিবির তিনটি কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন তাঁরা। বই চূড়ান্ত
করার জন্য আর একটি কর্মশালা হওয়ার কথা, কিন্তু এখন পর্যন্ত তা হয়নি।
এই
নেতারা জানান, ২০১৪ সালের মধ্যেই বই প্রণয়ন সম্পন্ন না হওয়ায় লক্ষ্য
নির্ধারণ করা হয় ২০১৫ সালের জানুয়ারি। ঠিক হয় ওই সময় প্রাক্-প্রাথমিক
পর্যায়ের বই হাতে দিয়েই চালু হবে সাদরি ভাষার শিশুদের লেখাপড়া।
এনসিটিবির
পক্ষে সাদরি ভাষায় পাঠ্যবই তৈরির কাজ সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন মো.
সাইদুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সমতলের ওঁরাও, মুন্ডা প্রভৃতি
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের পাশাপাশি পাহাড়ে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও গাড়ো
শিশুদের জন্য পাঠ্যবই প্রণয়নের কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। আদিবাসী
নেতাদের নিয়ে শেষ কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হবে অচিরেই। এরপরই বইয়ের বিষয়বস্তু
চূড়ান্ত হবে। এরপর বই ছাপানোর কাজ শুরু হবে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের
সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, বই ছাপানোর পাশাপাশি দরকার এসব ভাষায় দক্ষ
শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। কিন্তু এগুলোর কিছুই হয়নি। এতে ২০১৬
সালের মধ্যেও আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি
অনিশ্চয়তার মধ্যেই থাকল।
আদিবাসী-বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্র্যাট
সদস্য ও সমন্বয়কারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল প্রথম আলোকে
বলেন, আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি হওয়া
সত্ত্বেও এবং জাতীয় শিক্ষানীতিতে এর অনুমোদন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের
ধীর গতির কারণে এখন পর্যন্ত পাঠ্যবই প্রণয়ন সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া রাষ্ট্র ও
সরকার বিভিন্ন সময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করায়
তাঁদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আদিবাসী-বিষয়ক
সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয়
শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি
গ্রহণ করা হলেও চালু করতে বিলম্ব করা খুবই দুঃখজনক। অন্যান্য ভাষায় বই
প্রণয়নের কাজ কিছুটা এগোলেও সাঁওতালি ভাষার ক্ষেত্রে প্রাথমিক কাজই শুরু
হয়নি। তিনি এ বছরের মধ্যেই বই প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান।
Source: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/776815/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%83%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A5%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE-%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81-%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BE
|
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
0 comments:
Post a Comment