কেউ স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে শিক্ষক হবে। কেউ আবার নার্স কিংবা পুলিশ হতে চায়। কিন্তু জেলাতে কোনও সাঁওতালি মাধ্যমের মাধ্যমিক স্কুল না থাকায় স্বপ্নপূরণ তো দূর অস্ত, অষ্টম শ্রেণির পরে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে মুর্শিদাবাদের বহু পড়ুয়া। প্রাথমিক ও জুনিয়র হাইস্কুলগুলির অবস্থাও বিশেষ ভাল নয়। শ্রেণিকক্ষের অভাব তো রয়েইছে, তার থেকেও বড় সমস্যা অলচিকি হরফ জানা শিক্ষক নেই।
বিষয়টি অজানা নয় মুর্শিদাবাদ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে-র। কিন্তু অলচিকি হরফ জানা শিক্ষকের অভাব পূরণে ‘দেখছি’ বলা ছাড়া তিনি গত কয়েক মাসে বিশেষ কিছু করে উঠতে পারেননি। পূরবীদেবী বলছেন, ‘‘ওই ছেলেময়েদের স্বপ্নপূরণ করতে হলে ভাল ভাবে লেখাপড়া করা দরকার। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন অলচিকি হরফে লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা দক্ষ শিক্ষক। কিন্তু সেই রকম শিক্ষক না পাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিক্ষক পেলেই চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও চাওয়া হয়েছে। সাঁওতালি ভাষার পড়ুয়াদের জন্য খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু সহজ কোনও পথ দেখছি না।’’
অলচিকি হরফে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য ২০০৮ সালে নবগ্রাম থানার অনন্তপুর-মহরুল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পাখিরাডাঙা গ্রামে প্রাথমিক স্কুল চালু করা হয়। ওই গ্রামে বাংলা মাধ্যম প্রাথমিক স্কুল ঘরেই পাশাপাশি শুরু হয় সাঁওতালি মাধ্যমের প্রাথমিক স্কুল। একই রকম ভাবে সাগরদিঘি থানার বারালা গ্রাম পঞ্চায়েতের চোরদিঘি গ্রামে বাংলা ভাষার প্রাথমিক স্কুলঘরে শুরু হয় সাঁওতালি মাধ্যমের প্রাথমিক স্কুল। ২০১৩ সালে ওই দু’টি স্কুলকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। পাখিরাডাঙার বাংলা ভাষার প্রাথমিক স্কুলে ঘর রয়েছে ৪টি। তার মধ্যে ২টি ঘর ভাঙাচোরা। সেখানে সকালে ওই দুই মাধ্যমের প্রাথমিক স্কুলের পঠনপাঠন হয়। সেই ঘরেই দুপুরে হয় সাঁওতালি মাধ্যমের জুনিয়র হাইস্কুলের পঠনপাঠন। চোরদিঘির প্রাথমিক স্কুলে রয়েছে ৪টে ঘর। ওই চারটে ঘরে সাঁওতালি ও বাংলা মাধ্যমের প্রাথমিক স্কুল ও জুনিয়র হাইস্কুল মিলিয়ে মোট ১২টি শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। শ্রেণিকক্ষের মতোই করুণ দশা শিক্ষক নিয়োগেও।
পাখিরাডাঙা জুনিয়র হাইস্কুলের ৪টি শ্রেণির জন্য রয়েছেন এক জন স্থায়ী শিক্ষক আর দু’জন বিনা বেতনের সংগঠক শিক্ষক। চোরদিঘির অলচিকি ভাষার পাখিরাডাঙা জুনিয়র হাইস্কুলের ৪টি শ্রেণির ১৩০ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য অলচিকি জানা শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১ জন। তিনিই স্কুলে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। রয়েছেন আরও দু’জন সংগঠক শিক্ষক। চোরদিঘি জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিলীপ টুডু বলেন, ‘‘এ বার অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে উঠেছে ১৬ জন ছাত্রছাত্রী। অলচিকি হরফে নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ার মতো স্কুল নেই। চোরদিঘি জুনিয়র হাইস্কুলকে মাধ্যমিক স্কুলে উন্নীত করলে ওই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হবে না। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে সেই দাবি জানিয়েছি।’’ পাখিরাডাঙা জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক গনেশ হেমব্রমও বলেন, ‘‘আমাদের জুনিয়র হাইস্কুলকে মাধ্যমিক স্কুলে উন্নীত করে সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু তা হচ্ছে কই!’’
বাসিন্দারা ধরিয়ে দিচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন— জঙ্গলমহল হাসছে, আদিবাসী শিল্পীদের মাসিক ভাতা, জমির পাট্টার পাশাপাশি অলচিকি হরফে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা হবে। কিন্তু কই, বাস্তবে তো সেটা চোখে পড়ছে না!
source:http://www.anandabazar.com/district/nodia-murshidabbad/no-teachers-available-who-knows-santhali-language-1.331884#