সুন্দরবন-সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্ডা সম্প্রদায় অস্তিত্ব
সংকটের মুখে। জায়গা-জমি থেকে শুরু করে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি পর্যন্ত
হারাতে বসেছে তারা। একসময় অনেক জমি থাকলেও এখন তাদের বেশির ভাগই ভূমিহীন।
সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থার (সামস) দেওয়া তথ্যমতে, প্রায় আড়াই শ বছর আগে ভারতের ঝাড়খন্ড এলাকা থেকে মুন্ডাদের এই অঞ্চলে আনা হয়। সুন্দরবন কেটে আবাসভূমি গড়ে তোলার কাজে নিযুক্ত করা হয় তাদের। বর্তমানে শ্যামনগরে মুন্ডাদের ৪৫০টি পরিবারের জনসংখ্যা ২ হাজার ৩০০ জন। এসব পরিবারের ৯৫ শতাংশ ভূমিহীন। অশিক্ষা, অজ্ঞতা ও অভাবকে পুঁজি করে ভূমিদস্যুরা তাদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে।
সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থার (সামস) দেওয়া তথ্যমতে, প্রায় আড়াই শ বছর আগে ভারতের ঝাড়খন্ড এলাকা থেকে মুন্ডাদের এই অঞ্চলে আনা হয়। সুন্দরবন কেটে আবাসভূমি গড়ে তোলার কাজে নিযুক্ত করা হয় তাদের। বর্তমানে শ্যামনগরে মুন্ডাদের ৪৫০টি পরিবারের জনসংখ্যা ২ হাজার ৩০০ জন। এসব পরিবারের ৯৫ শতাংশ ভূমিহীন। অশিক্ষা, অজ্ঞতা ও অভাবকে পুঁজি করে ভূমিদস্যুরা তাদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে।
কাশিপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব অশ্বিনী কুমার মুন্ডা বলেন, এই বয়সেও দুই ছেলের সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতে হয় তাঁকে। ৫ শতাংশ জমিতে তাঁদের ১১ সদস্যের পরিবারের বাস। তাঁদের ১৩ বিঘা জমির সবই প্রভাবশালীরা জাল দলিল তৈরি করে আত্মসাৎ করেছে। সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রোষানলে পড়ে একের পর মিথ্যা মামলায় হয়রানি হতে হয়েছে তাঁকে।
একই গ্রামের তারক মুন্ডা বলেন, তিনি ১৯৯৬ সালে গ্রামের হেমনাথ মুন্ডার কাছ থেকে ৭ শতাংশ জমি কেনেন। কিন্তু স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হেমনাথ মুন্ডার স্বজনদের কাছ থেকে ওই জমি বন্ধক নেওয়ার অজুহাতে জাল দলিল তৈরি করেন। জমির দাবিতে আদালতে গেলে প্রতিপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে ১৬টি মিথ্যা মামলা দেয়। এসব মামলায় তাঁকে এবং তাঁর ভাই কৃষ্ণ মুন্ডাকে একাধিকবার গ্রেপ্তার হতে হয়েছে। এমন ঘটনা শুধু তাঁর ক্ষেত্রেই ঘটেনি, ধুমঘাট পল্লির যাদব, অনিল, মন্টু মুন্ডাসহ মুন্সিগঞ্জ ও গাবুরা এলাকায় বাসরত মুন্ডা সম্প্রদায়ের প্রায় প্রতিটি পরিবারের সঙ্গেই ঘটেছে। জমির মালিকানা ও দখল নিশ্চিত করতে অশ্বিনী, দেবেন, জলক, গোলক, আনন্দ ও অরবিন্দ মুন্ডার মতো মুন্ডা সম্প্রদায়ের আরও অনেককে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।
‘সামস’-এর নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণপদ মুন্ডা বলেন, তাঁদের আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। বাঙালিদের সঙ্গে ওঠবস ও লেখাপড়ার কারণে নিজেদের ‘শাদ্রী’ ভাষা ভুলতে বসেছে বর্তমান প্রজন্ম। প্রাথমিক পাঠ শেষে শিশুরা ঝরে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় মুন্ডারা তাঁদের দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কৃতিচর্চাও করতে পারছে না। জমি ও ভাষার পাশাপাশি নিজস্ব সংস্কৃতি বিলীন হওয়ার পথে। সাড়ে চার শ পরিবারের মধ্য তিনজন গ্রামপুলিশ এবং ১৩ জন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। অন্য সদস্যরা দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
0 comments:
Post a Comment