রংপুর চিনিকলে আখের খামার তৈরির জন্য
পাকিস্তান আমলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে অধিগ্রহণ করা হয় ১ হাজার ৮৪২ একর
কৃষিজমি। অধিগ্রহণের সময় শর্ত ছিল, আখ চাষ না হলে ওই জমি কৃষকদের কাছে ফেরত
দেয়া হবে। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে প্রায় দেড়
হাজার একর জমি ইজারা দিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ, যেখানে আখের পরিবর্তে চাষ হচ্ছে
অন্য ফসল। এ অবস্থায় জমি ফেরত পেতে আন্দোলনে নেমেছেন গোবিন্দগঞ্জের
ভূমিহীন কৃষকরা।
সরেজমিন গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ আখ খামারে গিয়ে দেখা গেছে, খামারের জন্য অধিগ্রহণকৃত ১ হাজার ৮৪২ একর জমির প্রায় এক-তৃতীয়াংশে আখ রোপণ করা হয়েছে এ বছর। বাকি জমি ইজারা নিয়ে সেখানে ধান, সবজি ও তামাক আবাদ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আবার চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইজারা নেয়া জমি ভূমিহীন কৃষকদের কাছে পুনরায় ইজারা দিচ্ছেন কেউ কেউ। এছাড়া অধিগ্রহণকৃত জমিতে বিশাল আকৃতির ছয়টি পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করে দেয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। এক্ষেত্রে সরকারের লিখিত আদেশ প্রয়োজন হলেও তা নেয়া হয়নি। বিষয়টিকে মিল কর্তৃপক্ষের প্রতারণা দাবি করে ক্ষোভে ফুঁসছেন গাইবান্ধার ভূমিহীন কৃষকরা।
নিজেদের হারানো জমিতে আখ চাষ না করে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে অন্য ফসল উত্পাদন করায় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হয়েছে দাবি করে ওই জমি ফেরত পেতে আন্দোলনে নেমেছেন ভূমিহীন বাঙালি, সাঁওতাল, মান্দি, গারো, মালপাহাড়ি, ভুজপুরী, ভূমিজ, মুচি, মেথর, তাঁতিসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। এ দাবিতে দুই বছর ধরে প্রতি শনিবার তীর, ধনুক, কাঁচি ও দা নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছেন তারা।
তবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন বলছে, এসব আন্দোলন ভিত্তিহীন। আগামী মৌসুমেই পুরো জমি আখ চাষের আওতায় আসবে। ইজারা দেয়া যদি ভুল সিদ্ধান্ত হয়, তবে তার দায়ভার বর্তমান কর্তৃপক্ষ নেবে না। যদিও মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, করপোরেশনের সিদ্ধান্তেই এসব জমি ইজারা দিয়েছে তারা।
এ বিষয়ে রংপুর চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবদুল মজিদ বলেন, ‘২০০৭ সালে যখন মিলটি পুনরায় চালু হয়, তখন নিজস্ব আবাদের জন্য লোকবল ছিল না। ফলে করপোরেশনের সিদ্ধান্তেই আখ চাষের জন্য জমি ইজারা দেয়া হয়। এখন আমরা নিজেরাই চাষাবাদ করছি।’ কিছু লোক উসকানি দিয়ে আন্দোলন করাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে মিলটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই সময় কর্মীও ছাঁটাই করা হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মিলটি আবারো উত্পাদনে আসে। চলতি অর্থবছর ৪ হাজার ৬০০ একর জমির আখ ক্রয় করে মাড়াইয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে আখ সংগ্রহ হবে ৫৭৬ একর জমি থেকে। বাকি আখ বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
জানা গেছে, আখের খামার তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৬২ সালের ৭ জুলাই পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ও পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই চুক্তিপত্রের ৪ নং শর্তে বলা হয়, যে উদ্দেশ্যে এ জমি দখল করা হয়েছে, তা ব্যতীত অন্য কোনো কাজে এ সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারবে না। চুক্তির ৬ নং শর্তে বলা হয়েছে, এ জমি অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইলে সরকারের লিখিত আদেশ লাগবে। আর ৫ নং শর্তে বলা হয়েছে, যে উদ্দেশ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তা ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার হলে প্রাদেশিক সরকারের কাছে ওই জমি হস্তান্তর করবে করপোরেশন, যাতে সরকার জমি মুক্ত করে ফেরত দিতে পারে।
চুক্তির এসব শর্ত ভঙ্গ হওয়ায় জমি ফেরত চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন স্থানীয় ভূমিহীন কৃষকরা। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। জমির বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।’ ভূমির দাবিতে বিক্ষোভ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক দিন থেকেই হয়ে আসছে। শাক্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কোনো সমস্যা নেই। তবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে ২০১৫ সালের ২১ জুন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রংপুর সুগার মিল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, আবেদনকারীর বক্তব্য ও দলিল-কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। রংপুর সুগার মিল কর্তৃপক্ষ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইজারা কার্যক্রম পরিচালনা এবং আখ ও অন্যান্য ফসল আবাদ করে আসছে। তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ সরেজমিন সাহেবগঞ্জ গিয়ে আখ চাষের জমিতে ধান, তামাক ও মিষ্টি কুমড়ার আবাদ দেখতে পান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)।
জমি ইজারা দিয়ে অন্য ফসল উত্পাদনের প্রমাণ পাওয়া যায় চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নথিপত্রেও। বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি দিয়ে ইজারা দেয়া ১ হাজার ৪৬০ একর জমি উদ্ধার ও তা আখ চাষের আওতায় আনার তাগিদ দেয় সংস্থাটি।
খামারের মধ্যে থাকা ছয়টি পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির অভিযোগও রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। স্থানীয় ভূমিহীন কৃষক আবদুল আজিজ বলেন, ২০-২৫টি ট্রাক ১৫ দিন ধরে মাটি ভরে নিয়ে গেছে। প্রতিদিন ১৫-২০ বার ট্রিপ দিয়েছে প্রতিটি ট্রাক। ইটভাটায় এসব মাটি বিক্রি করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
জমি ইজারা দেয়া, মাটি কাটা ও আখ চাষ না করে অন্যান্য ফসল চাষ করার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘অবহেলা যদি থেকে থাকে, তবে তা আগের ম্যানেজমেন্টের। তারা হয়তো ভেবেছিল, ইজারা দিয়ে আখ চাষ ভালো হবে। সে দায়ভার আমি নেব না।’
তিনি বলেন, আমি সব ইজারা বাতিল করেছি। এখন সম্পূর্ণ জমি ইজারামুক্ত। এ বছর অর্ধেক জমিতে আখ চাষ হয়েছে। আগামী বছর আরো বেশি পরিমাণ জমি আখ চাষের আওতায় আসবে। একসঙ্গে সম্পূর্ণ জমিতে আখ চাষ করা যায় না বিধায় কিছু জমি অন্য কাজে ব্যবহার করা হবে।
পুকুরের মাটি বিক্রি করে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দুটি পুকুর খনন করা হয়েছে। বাকি পুকুরগুলো অনুরোধ করে খনন করানো হয়েছে। এখানে মাছ চাষ হবে। অচিরেই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে রংপুর চিনিকল। মাটি নিয়ে পুকুরগুলো খনন করেছে ঠিকাদার।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে লোকসানে থাকা মিলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় শ্রমিকদের স্থায়ীভাবে ছাঁটাই করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর ২০০৬ সালের ১৬ জুলাই মিলটি চালু করার ব্যবস্থা নিতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়। ফলে মিলটি আবার চালু হলে ইজারা দিয়ে আখ চাষের সিদ্ধান্ত নেয় করপোরেশন। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৩৩ দিন চালু থেকে ৫ হাজার ৩২৫ টন চিনি উত্পন্ন হয়। এর পর থেকে প্রতি বছরই উত্পাদন হচ্ছে চিনি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ হাজার ২৬৮ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৪০ টন চিনি উত্পাদন হয়। বছরে ১৫ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত মিলটি চালু থাকে বলে জানা গেছে।
Source: http://www.bonikbarta.com/news/details/75728.html
সরেজমিন গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ আখ খামারে গিয়ে দেখা গেছে, খামারের জন্য অধিগ্রহণকৃত ১ হাজার ৮৪২ একর জমির প্রায় এক-তৃতীয়াংশে আখ রোপণ করা হয়েছে এ বছর। বাকি জমি ইজারা নিয়ে সেখানে ধান, সবজি ও তামাক আবাদ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আবার চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইজারা নেয়া জমি ভূমিহীন কৃষকদের কাছে পুনরায় ইজারা দিচ্ছেন কেউ কেউ। এছাড়া অধিগ্রহণকৃত জমিতে বিশাল আকৃতির ছয়টি পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করে দেয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। এক্ষেত্রে সরকারের লিখিত আদেশ প্রয়োজন হলেও তা নেয়া হয়নি। বিষয়টিকে মিল কর্তৃপক্ষের প্রতারণা দাবি করে ক্ষোভে ফুঁসছেন গাইবান্ধার ভূমিহীন কৃষকরা।
নিজেদের হারানো জমিতে আখ চাষ না করে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে অন্য ফসল উত্পাদন করায় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হয়েছে দাবি করে ওই জমি ফেরত পেতে আন্দোলনে নেমেছেন ভূমিহীন বাঙালি, সাঁওতাল, মান্দি, গারো, মালপাহাড়ি, ভুজপুরী, ভূমিজ, মুচি, মেথর, তাঁতিসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। এ দাবিতে দুই বছর ধরে প্রতি শনিবার তীর, ধনুক, কাঁচি ও দা নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছেন তারা।
তবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন বলছে, এসব আন্দোলন ভিত্তিহীন। আগামী মৌসুমেই পুরো জমি আখ চাষের আওতায় আসবে। ইজারা দেয়া যদি ভুল সিদ্ধান্ত হয়, তবে তার দায়ভার বর্তমান কর্তৃপক্ষ নেবে না। যদিও মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, করপোরেশনের সিদ্ধান্তেই এসব জমি ইজারা দিয়েছে তারা।
এ বিষয়ে রংপুর চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবদুল মজিদ বলেন, ‘২০০৭ সালে যখন মিলটি পুনরায় চালু হয়, তখন নিজস্ব আবাদের জন্য লোকবল ছিল না। ফলে করপোরেশনের সিদ্ধান্তেই আখ চাষের জন্য জমি ইজারা দেয়া হয়। এখন আমরা নিজেরাই চাষাবাদ করছি।’ কিছু লোক উসকানি দিয়ে আন্দোলন করাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে মিলটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই সময় কর্মীও ছাঁটাই করা হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মিলটি আবারো উত্পাদনে আসে। চলতি অর্থবছর ৪ হাজার ৬০০ একর জমির আখ ক্রয় করে মাড়াইয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে আখ সংগ্রহ হবে ৫৭৬ একর জমি থেকে। বাকি আখ বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
জানা গেছে, আখের খামার তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৬২ সালের ৭ জুলাই পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ও পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই চুক্তিপত্রের ৪ নং শর্তে বলা হয়, যে উদ্দেশ্যে এ জমি দখল করা হয়েছে, তা ব্যতীত অন্য কোনো কাজে এ সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারবে না। চুক্তির ৬ নং শর্তে বলা হয়েছে, এ জমি অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইলে সরকারের লিখিত আদেশ লাগবে। আর ৫ নং শর্তে বলা হয়েছে, যে উদ্দেশ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তা ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার হলে প্রাদেশিক সরকারের কাছে ওই জমি হস্তান্তর করবে করপোরেশন, যাতে সরকার জমি মুক্ত করে ফেরত দিতে পারে।
চুক্তির এসব শর্ত ভঙ্গ হওয়ায় জমি ফেরত চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন স্থানীয় ভূমিহীন কৃষকরা। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। জমির বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।’ ভূমির দাবিতে বিক্ষোভ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক দিন থেকেই হয়ে আসছে। শাক্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কোনো সমস্যা নেই। তবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে ২০১৫ সালের ২১ জুন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রংপুর সুগার মিল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, আবেদনকারীর বক্তব্য ও দলিল-কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। রংপুর সুগার মিল কর্তৃপক্ষ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইজারা কার্যক্রম পরিচালনা এবং আখ ও অন্যান্য ফসল আবাদ করে আসছে। তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ সরেজমিন সাহেবগঞ্জ গিয়ে আখ চাষের জমিতে ধান, তামাক ও মিষ্টি কুমড়ার আবাদ দেখতে পান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)।
জমি ইজারা দিয়ে অন্য ফসল উত্পাদনের প্রমাণ পাওয়া যায় চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নথিপত্রেও। বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি দিয়ে ইজারা দেয়া ১ হাজার ৪৬০ একর জমি উদ্ধার ও তা আখ চাষের আওতায় আনার তাগিদ দেয় সংস্থাটি।
খামারের মধ্যে থাকা ছয়টি পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির অভিযোগও রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। স্থানীয় ভূমিহীন কৃষক আবদুল আজিজ বলেন, ২০-২৫টি ট্রাক ১৫ দিন ধরে মাটি ভরে নিয়ে গেছে। প্রতিদিন ১৫-২০ বার ট্রিপ দিয়েছে প্রতিটি ট্রাক। ইটভাটায় এসব মাটি বিক্রি করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
জমি ইজারা দেয়া, মাটি কাটা ও আখ চাষ না করে অন্যান্য ফসল চাষ করার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘অবহেলা যদি থেকে থাকে, তবে তা আগের ম্যানেজমেন্টের। তারা হয়তো ভেবেছিল, ইজারা দিয়ে আখ চাষ ভালো হবে। সে দায়ভার আমি নেব না।’
তিনি বলেন, আমি সব ইজারা বাতিল করেছি। এখন সম্পূর্ণ জমি ইজারামুক্ত। এ বছর অর্ধেক জমিতে আখ চাষ হয়েছে। আগামী বছর আরো বেশি পরিমাণ জমি আখ চাষের আওতায় আসবে। একসঙ্গে সম্পূর্ণ জমিতে আখ চাষ করা যায় না বিধায় কিছু জমি অন্য কাজে ব্যবহার করা হবে।
পুকুরের মাটি বিক্রি করে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দুটি পুকুর খনন করা হয়েছে। বাকি পুকুরগুলো অনুরোধ করে খনন করানো হয়েছে। এখানে মাছ চাষ হবে। অচিরেই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে রংপুর চিনিকল। মাটি নিয়ে পুকুরগুলো খনন করেছে ঠিকাদার।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে লোকসানে থাকা মিলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় শ্রমিকদের স্থায়ীভাবে ছাঁটাই করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর ২০০৬ সালের ১৬ জুলাই মিলটি চালু করার ব্যবস্থা নিতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়। ফলে মিলটি আবার চালু হলে ইজারা দিয়ে আখ চাষের সিদ্ধান্ত নেয় করপোরেশন। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৩৩ দিন চালু থেকে ৫ হাজার ৩২৫ টন চিনি উত্পন্ন হয়। এর পর থেকে প্রতি বছরই উত্পাদন হচ্ছে চিনি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ হাজার ২৬৮ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৪০ টন চিনি উত্পাদন হয়। বছরে ১৫ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত মিলটি চালু থাকে বলে জানা গেছে।
Source: http://www.bonikbarta.com/news/details/75728.html
0 comments:
Post a Comment