Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

লিপি নিয়ে বিরোধ মেটাতে পারেনি সাঁওতালরা: এবার মাতৃভাষায় বই পাচ্ছে পাঁচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা

মোশতাক আহমেদ | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে আগামী শিক্ষাবর্ষ (২০১৭) থেকে মাতৃভাষায় পড়ার সুযোগ পাচ্ছে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা। এই নৃগোষ্ঠীগুলো হলো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা (ককবরক), গারো ও ওঁরাও (সাদরি)। এই পাঁচ জাতিগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ১০ লাখের বেশি। এর মধ্যে চাকমা ও মারমা ভাষার বইগুলো তাদের নিজস্ব লিপিতে লেখা। কিন্তু বাকি তিনটি নৃগোষ্ঠীর বইগুলো লেখা হচ্ছে কোনোটি বাংলা লিপিতে, কোনোটি রোমান হরফে।
আগামী বছর শুধু প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় বই দেওয়া হবে। পরের বছর (২০১৮) প্রথম শ্রেণি ও এর পরের বছর দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বইও মাতৃভাষায় ছাপিয়ে বিনা মূল্যে বিতরণ করা হবে। তবে এরপর ধীরে ধীরে সবাইকে জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বই পড়তে হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটার জন্য আমরা অনেক দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। এটা হলে খুবই ভালো হবে। তবে শুধু বই হলেই মাতৃভাষায় শিক্ষা হয়ে যাবে এমনটা নয়। এখনো শিক্ষক প্রশিক্ষণ হয়নি। সেটা না হওয়া পর্যন্ত এটা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যাবে।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবির) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চার কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এই তথ্য জানান। তাঁরা বলেন, ইতিমধ্যে পাঠ্যসূচি অনুযায়ী বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করা হয়েছে। এখন চাহিদা অনুযায়ী বই ছাপানো হবে। পাণ্ডুলিপিতে দেখা যায়, নিজস্ব সংস্কৃতির চিত্রসহ আনুষঙ্গিক বিষয় দিয়ে বইগুলো সাজানো হয়েছে।
এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, চাকমা ভাষার বইয়ের চিত্রগুলো করার কাজে যুক্ত ছিলেন শিল্পী কনকচাঁপা চাকমা। মারমা ভাষার বই লেখার কাজ সমন্বয় ও সম্পাদনা কমিটির প্রধান খাগড়াছড়ির মহালছড়ির পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা অংক্যজাই মারমা।
জানতে চাইলে অংক্যজাই মারমা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কাজটি বেশ কঠিন। প্রায় দেড় বছর কাজ করার পর গত ৯ মে বইটি এনসিটিবিতে দাখিল করা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য জাতীয়ভাবে প্রণীত বইয়ের আদলেই এসব বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করা হয়েছে। তবে বর্ণভিত্তিক পরিচয়গুলো দেওয়া হয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতির।
এনসিটিবির একাধিক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ বলেন, শিশুকে শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়া জরুরি। এরপর সে ধীরে ধীরে মাতৃভাষার সঙ্গে অন্য ভাষায় (বাংলাদেশের জন্য বাংলা) শিক্ষা নেবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সময় সাত বছর। এই সময়টাকে বলে ‘ব্রিজিং পিরিয়ড’। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষানীতির আলোকে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরি—এই পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করবে। কিন্তু এত দিনেও তা চূড়ান্ত করতে পারেনি।
এনসিটিবির একজন শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যখন শিক্ষানীতি অনুমোদিত হয়, তখন শিক্ষাক্রম সংশোধনের কাজ শুরু হয়ে যায়। এ জন্য তখন সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষাক্রম সংশোধন হয়ে গেলে সে অনুযায়ী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় বই দেওয়া হবে। কিন্তু শিক্ষাক্রম তৈরির পর এ ধরনের বই লেখার মতো ভালো লেখক পাওয়া যাচ্ছিল না। তা ছাড়া লিপি একটা বড় সংকট হয়ে দেখা দেয়। চাকমা ও মারমাদের মৌখিক ও লিখিত উভয় রূপ থাকলেও ত্রিপুরা, গারো ও সাদরি নৃগোষ্ঠীর ভাষার নিজস্ব লিপি নেই। কোন লিপিতে তাদের ভাষার পাঠ্যবই লেখা হবে, এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বেশ সময় লেগে যায়।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, দেশে ৩৭টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী থাকলেও বেশির ভাগেরই নিজস্ব লিপি নেই। সাঁওতালদের নিজস্ব লিপি না থাকায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোন লিপি গ্রহণ করা হবে, এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয়। একটি পক্ষ বাংলা লিপি গ্রহণের পক্ষপাতী হলেও আরেকটি পক্ষ রোমান হরফ নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়। এ বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় সাঁওতাল ভাষার পাঠ্যপুস্তক এবার বের করা সম্ভব হচ্ছে না।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, আটটি বিষয় নিয়ে মাতৃভাষায় বই দেওয়ার প্যাকেজটি করা হয়েছে। বইয়ের পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু ছাপার কাজ বাকি। এই কাজে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ইউনিসেফ।
এনসিটিবির সদস্য রতন সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে শিক্ষার্থী ও বইয়ের চাহিদা দিতে বলেছে এনসিটিবি। শিগগির এই তালিকা পাওয়ার পর বই ছাপানোর কাজ শুরু হবে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর বলেন, শিক্ষার্থী ও বইয়ের সংখ্যার চাহিদা শিগগিরই দেওয়া হবে।
Source:http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/910780/
 
Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment