কালিদাস রায়, নাটোর ॥ বাদপড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জাতিসত্তার তালিকা
গেজেটভুক্ত না হওয়ায় মিলছে না প্রত্যয়নপত্র। একই কারণে গেজেট বহির্ভূত
জাতিসত্তার কেউ জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনপত্র দাখিল করেও পাচ্ছে না
কাক্সিক্ষত আদিবাসী প্রত্যয়নপত্র। যেসব ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী গেজেটভুক্ত কেবল
তাদেরই প্রত্যয়নপত্র প্রদান করা হচ্ছে। এদিকে আদিবাসী হওয়া সত্ত্বেও
কাক্সিক্ষত সময়ে প্রত্যয়নপত্র হাতে না পেয়ে হতাশ অনেক শিক্ষার্থীসহ
আদিবাসীভুক্ত মানুষ। স্কুল-কলেজে ভর্তি, চাকরিসহ সরকারী নানা সুযোগ-সুবিধা
থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। ফলে নানাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে আদিবাসী
শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ।
২০১০ সালে ১২
এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন বলে
২৭টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করা হয়। অথচ জাতীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে
গঠিত ৩০ সদস্যবিশিষ্ট আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস কমিটি জাতীয় সংসদে ৭৫টি
আদিবাসী সম্প্রদায়ের নাম গেজেটভুক্তির প্রস্তাবনা রাখে। ২০১০ সালের ৪
এপ্রিল বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আইনে ২৭টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
জাতিসত্তার নাম উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকার গেজেট প্রকাশ করলে আদিবাসী
জাতিগোষ্ঠী তা ভুল বলে প্রত্যাখ্যান করে । পাশাপাশি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী
‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আইন’ মতে বাদপড়া জাতিগোষ্ঠীর নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্তির
দাবিতে জেলায় জেলায় সভা সমাবেশ করে। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বাদপড়া আদিবাসী
জাতিগোষ্ঠীর নাম তালিকাভুক্ত করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানোর জন্য
সকল জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ নির্দেশনার আলোকে পরবর্তীতে
আরও ২২৮টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জাতিসত্তার নামের তালিকা পাঠানো হলে
গেজেটভুক্ত ২৭টিসহ মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫৫টিতে। আর আদিবাসী নেতারা এই বাদপড়া
আদিবাসীদের নাম গেজেটে তালিকাভুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে।
নাটোরে
মু-া, উঁরাও, মাহাতো, সিং, সাঁওতাল, পাহাড়ী, রবিদাস, বাগদীসহ প্রায় ২২টি
আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে। এর মধ্যে নাটোরে মু-া, সাঁওতাল, উঁরাও,
মালপাহাড়ী, পাহাড়ী এ পাঁচটি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর নাম গেজেটভুক্ত হয়েছে। তবে
বর্তমানে যেসব আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী তালিকা থেকে বাদ পড়েছে তারা আদিবাসী
প্রত্যয়নপত্র পাবে না এমনটাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আইনে বলা হয়েছে।
আদিবাসী
নেতারা দীর্ঘদিন থেকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, বাদ পড়া আদিবাসীদের
তালিকাভুক্তি, পৃথক ভূমি কমিশন গঠনসহ নানা দাবি সরকারের কাছে পেশ করে আসছে।
এর মধ্যে সংসদীয় ককাস কমিটির মাধ্যমে ২৭টি জাতিগোষ্ঠীর নাম গেজেটে প্রকাশ
করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান জানান, সরকারীভাবে যে সমস্ত ক্ষুদ্র
নৃ-গোষ্ঠী জাতিসত্তার নাম গেজেটভুক্ত হয়েছে আমরা কেবল তাদেরই প্রত্যয়নপত্র
দিচ্ছি। গেজেট বহির্ভূতদের প্রত্যয়নপত্র প্রদান আইনবিরোধী বটে। তবে বাদপড়া
জাতিসত্তার নাম গেজেটে তালিকাভুক্তির ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হয়েছে।
প্রকাশিত : ১১ ডিসেম্বর ২০১৫
Source: https://www.dailyjanakantha.com/
0 comments:
Post a Comment