আ. হান্নান আকন্দ, গাইবান্ধা / ১০:৪৭ অপরাহ্ন, নভেম্বর ২১,২০১৬
জেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের সাঁওতালদের ওপর হামলা, লুটপাট ও বসতবাড়িতে
অগ্নিসংযোগের দুই সপ্তাহ পরও উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালদের ব্যাপারে সুরাহা হয়নি।
উপায় না পেয়ে তারা বসবাস শুরু করেছেন কলাপাতার ঘরে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বড় জয়পুর গ্রামে সরজমিনে যাওয়া হলে সোমবার এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
উদ্বাস্তু হয়ে পড়া সাঁওতালদের অনেকে শীতে
এবং কুয়াশার মধ্যে অতিকষ্টে কলাগাছের পাতা দিয়ে ঘর বানিয়ে থাকছেন। খোলা
আকাশের নিচে চুলা বানিয়ে সেখানে রান্না করে খাচ্ছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন
সংগঠনের পক্ষ থেকে যে রিলিফ দেয়া হচ্ছে তা দিয়েই তারা জীবনধারণ করছেন।
ওই গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্টিনা হেমরম
জানান, ৬ নভেম্বর সাহেবগঞ্জের রংপুর চিনিকলের জায়গায় তাদের তোলা ঘরবাড়ি
পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেদিনের কথা মনে পড়লে আজও বুক কেঁপে ওঠে। ঘরের আসবাবপত্র
রক্ষা করা তো দূরের কথা, জীবন বাঁচানোই ছিল কষ্টকর।
তিনি আরো জানান, শান্ত টুডু নামে তার সাত
বছরের একটি শিশু সন্তান আছে। তার মধ্যে থেকে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। সে প্রায়
রাতেই ঘুমের ঘোরে আগুন আগুন বলে চিৎকার করে ওঠে।
একই গ্রামের বাসিন্দা ইনট্রি টুডু জানান, এ
ঘটনার পর থেকেই তারা বসত বাড়ি হারা হয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
রাতে কুয়াশায় শরীর ভিজে যায়। তারই উপর ঠাণ্ডা বাতাসে কেপে ওঠে শরীর। ফলে
অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। তার মতো অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ভিউজিউস হেমরম নামে ওই গ্রামের আরেক
বাসিন্দা জানান, রাতের কুয়াশা আর ঠাণ্ডা বাতাস থেকে পরিবারকে রক্ষা করতে
কলার গাছের পাতা দিয়ে তৈরি করা ঘরে কোনো মতে রাত কাটানো হচ্ছে।
স্থানীয় মানুয়েল মার্ডী জানান, খোলা
আকাশের নিচে ঠাণ্ডার মধ্যে থাকতে থাকতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের
মধ্যে বৃদ্ধ আর শিশুর সংখ্যাই বেশি। তিনি বড় জয়পুর গ্রামে অস্থায়ী চিকিৎসা
ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান।
উপজেলার জয়পুর গ্রামের রিনা মার্ডী জানান,
এত দিন ছিলাম খোলা আকাশের নিচে। এখন আছি কলার পাতার ছাউনি ঘরে। এ ভাবে আরো
কতদিন থাকতে হবে সেটা তার জানা নেই।
সরকারি দলের নেতারা এসে বলেছিলেন, আমাদের
বাব দাদার জায়গা ফিরে দিবেন। সেই সঙ্গে ঘর তোলার অর্থ দিবেন। কিন্তু এরপর
প্রায় ২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তাদের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
তিনি এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান
সরকারের স্ত্রী আফরোজা বানু সুইটি সোমবার বিকালে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল
পরিবারের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। এ সময় তিনি সাঁওতালদের কষ্ট দেখে
দুঃখ প্রকাশ করেন এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
গত ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার
সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের জায়গা উদ্ধারকে কেন্দ্র
করে চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ও পুলিশের সঙ্গে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজনের
সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে থাকা চিনিকলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা
সাঁওতালদের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্যামল হেমরম মারা
যান। মঙ্গল মার্ডী ও রোমেশ সরেনের মৃত পাওয়া যায় নিকটবর্তী ক্ষেতে। এ ছাড়া
বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন।
0 comments:
Post a Comment