বিক্ষোভ মানববন্ধন * এখনও আতংক কাটেনি
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির দখল নিয়ে
সাঁওতালদের সঙ্গে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে
এক সাঁওতাল যুবকের মৃতুর একদিন পর আরও একজনের লাশ পাওয়া গেছে। গোবিন্দগঞ্জ
থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার জনান, সোমবার রাতে লোকজনের কাছ থেকে খবর
পেয়ে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারসংলগ্ন মাদারপুরের একটি ধানের জমি থেকে মঙ্গল
মুরমু নামে এক সাঁওতালের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট
উপজেলার রাণীগঞ্জের ডাণ্ডুপুরে। ওসি আরও বলেন, তিনি কীভাবে মারা গেছেন তা
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে না পাওয়ার আগে বলা সম্ভব নয়। তবে হাসপাতালের একটি
সূত্র বলছে, নিহত ব্যক্তির শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
রোববারের ঘটনার পর
গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এবং পাশের সাঁওতাল পল্লী জয়পুর,
মাদারপুর, সিংটাজুরিসহ সাপমারা ইউনিয়নের অন্য গ্রামগুলোতে এখনও পরিস্থিতি
স্বাভাবিক হয়নি। আবার হামলা ও লুটপাটের আতংকে উদ্বিগ্ন দিন কাটাচ্ছে
সাঁওতাল পরিবারগুলো। ৪২ জনের নামসহ ৪শ’ জনকে আসামি করে পুলিশ মামলা করার পর
গ্রেফতার আতংকে ওইসব পল্লীর পুরুষরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
সাঁওতালরা অভিযোগ
করেছেন, তাদের বসতি উচ্ছেদের সময় পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের হামলাকালে তাদের
বেশকিছু মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের পরিণতি নিয়েও তারা দুশ্চিন্তায়।
এর আগে রোববার রাতে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে শ্যামল
সরেন কিসকু নামে এক সাঁওতাল মারা যান। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় এ নিয়ে দুই
সাঁওতালের মৃত্যু হল।
মঙ্গলবার মাদারপুর ও জয়পুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,
সাঁওতাল পল্লীর রাস্তায় আতংকিত মুখে নারী ও শিশুরা দাঁড়িয়ে আছেন। নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী ও বৃদ্ধ জানান, ইক্ষু
খামারে তাদের বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার পর ব্যাপক লুটপাট ও মারধর চালানো হয়।
তাদের গবাদি পশু ও সহায় সম্বল হামলাকারীরা লুট করে নিয়ে যায়। তারপর থেকে
এলাকায় প্রচার চালানো হয় তাদের মূল বাস্তুভিটার জমিও দখল করে নেয়া হবে।
হামলাকারীদের নির্যাতনের ভয়ে তারা হাটবাজারেও যেতে পারছেন না। নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক অপর এক সাঁওতাল যুবক জানান, মার্চে ইক্ষু খামারের জমি পুনরুদ্ধার
কমিটি গঠিত হয়। সেই থেকে তাদের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ
চেয়ারম্যান শাকিল আহমেদ বুলবুল। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির
সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন জানান, বিনা উসকানিতে পুলিশসহ মিল কর্তৃপক্ষের
লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা সাঁওতালদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ওই হামলার পর
দু’জনের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ১৫ জনের
মতো এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকদের ওপর হামলা, হত্যা,
ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া এবং নির্যাতন ও লুটপাটের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে
বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে গাইবান্ধা
শহরের ডিবি রোডে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদ।
গোবিন্দগঞ্জের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত
জয়পুর ও মাদারপুর এলাকায় যান এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকজনকে
নিরাপত্তা ও সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, পুরো পরিস্থিতি
খতিয়ে দেখে পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি ভূমিহীন সাঁওতালদের উপজেলা
নির্বাহী অফিসারের কাছে খাসজমি বরাদ্দের জন্য আবেদন করতে বলেন। এ সময় তিনি
ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ অর্থ ও চাল বিতরণ করেন।
উৎস:http://www.jugantor.com/news/2016/11/09/75138/%E0%A6%97%E0%A7%8B%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%97%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A6%93-%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%93%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B6-%E0%A6%89%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
0 comments:
Post a Comment