Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

সাঁওতালের দুঃখ নিয়ে পানি ফেলছেন বুদ্ধিজীবীরা কেউ কেউ, মেপে মেপে

আমাদের অর্থনীতি :
13.11.2016
ফিরোজ আহমেদ।গোবিন্দগঞ্জে যা দেখে এলাম, তা লেখার অবকাশ কোথায়! গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে বন্ধুরা সামান্য কিছু সহায়তা নিয়ে গিয়েছিলেন, সহায়হীন এই মানুষগুলোকে চাল-ডাল কিনে দেওয়ার জন্য। কথা ছিল আজ তা বিতরণ করা হবে। কিন্তু ইউএনও সাহেব নাকি বিশাল বাহিনী নিয়ে নিজে উপস্থিত থেকে সেগুলোর বন্টন বন্ধ করেছেন। কেননা এতেও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। সংক্ষেপে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ জানাইÑ
এক. আগেই আপনারা জেনেছেন, পুরো এলাকাটা ঘিরে ফেলা হচ্ছে কাটাতারের বেড়ায়। পাকিস্তান আমলে এই জমি অধিগ্রহণের চুক্তিতে বলা ছিল, আখ চাষ না করা হলে জমি অবমুক্ত করে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বর্তমানে মিলের উৎপাদন নেই প্রায়, বছরে কয়েকদিন মাত্র চালু থাকে। প্রায় দুই হাজার একরের বিশাল অঞ্চলটিকে মিলের কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতোই ইজারা দিচ্ছেন অন্যান্যদের কাছে। এরই ভাগ পান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও।
দুই. ছাই হয়ে যাওয়া ঘর-বাড়িতে কলের লাঙল দিয়ে চাষ দেওয়া হচ্ছে, ভিটেয় হাল চাষের প্রতীকি তাৎপর্য ক্ষমতার দম্ভ প্রদর্শন। অথচ ওই ভূমিকে কৃষিযোগ্য করেছিলেন এই সাঁওতালদেরই পূর্বপুরুষেরা।
তিন. উত্তরবঙ্গে শুরু হতে যাওয়া শীতল আবহাওয়ায় উচ্ছেদ হওয়া নাগরিকেরা আছেন খোলা আকাশের নিচে। তাদের অধিকাংশই একবস্ত্রে বের হয়ে আসতে পেরেছেন। আর কোনো সহায় সম্বল তাদের নেই।
চার. যাতায়াত অত্যন্ত কঠিন সেখানে। এর একদিকে পাহারা দিচ্ছে সরকারি মাস্তানবাহিনী, মারধর করছে, আরেকদিকে পুলিশ। গ্রেফতার করার ভীতি ছড়াচ্ছে একতরফা মামলাতে। ফলে হাটবাজারও বন্ধ। কাজের সন্ধানও বন্ধ।
পাঁচ. সাঁওতালরা এই জনপদে সবচেয়ে পরিশ্রমী জাতি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু কি দিনাজপুর, কি নওগাঁ, কি গাইবান্ধা, অঞ্চল নির্বিশেষে তাদের শীর্ণকায় দেহ চোখে না পড়ে পারবে না। কাল দেখলাম, তাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে এসেছে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কেজি দুয়েক করে চাল আর ডাল, এক লিটার ভোজ্যতেল, আর একটা কাপড়। এখন পর্যন্ত এইটুকুই জুটেছে।
ছয়. সাঁওতাল সম্প্রদায়ের পড়াশোনার ঝোঁক বেশ আশা জাগানিয়া। প্রায় সব শিশু বিদ্যালয়গামী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, এমন সংখ্যা কম নয়। গাইবান্ধা যাবার আগের দিনই জাহাঙ্গীরনগরে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয় হলো, তিনি দুঃখ করে বলছিলেন, এখানে প্রত্মতত্ত্ব পড়ছি, রুশ বিপ্লব নিয়ে আলোচনা শুনছি আর আমার মা-বাবার ওপর এই অত্যাচার চলছে।
সাত. স্থানীয় সাংবাদিকদের একটা অংশকে কিনে নিয়েছেন আওয়ামী নেতারা। তারা শুরুর দিকে একচেটিয়াভাবে সাঁওতাল সম্প্রদায়কে দখলদার হিসেবে দেখাবার চেষ্টা করেছেন। তবে কয়েকজনকে পাওয়া গেল যারা আন্তরিকভাবে ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
আট. সাঁওতালের দুঃখ নিয়ে পানি ফেলছেন বুদ্ধিজীবীরা কেউ কেউ, মেপে মেপে। কিন্তু ঘটনার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করা? আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকা উন্মোচন করা? বিশাল নীরবতা। আর কবে মোসাহেব লজ্জা পেতে শিখবে?
নয়. সারাদেশে আওয়ামী লীগের গ্রাম ও মফস্বল পর্যায়ের নেতাদের ভূমির ক্ষুধার শিকার হয়েছেন আরও অনেকের মতো গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল সম্প্রদায়। এই হলো এর শ্রেণিগত দিক। তারই রাজনৈতিক আর মতাদর্শ কি বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আক্রমণের বেপরোয়া ধরনে, লুণ্ঠন আর নির্যাতনে। দুজন মানুষ শুধু খুনই হননি, নিখোঁজ রয়েছেন বেশ কজন। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ বলেই ঘটনার তুলনায় সামান্যই প্রকাশ পেয়েছে গণমাধ্যমে। এমনকি আক্রান্ত মানুষগুলোকে সামান্য ত্রাণ দিতে গিয়েও হামলার শিকার হওয়াতে বোঝা যায়, কত নির্বিকার চিত্তে এই জাতিগত নিপীড়ন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে বাংলাদেশে।
লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন। সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন
ফেসবুক থেকে
http://amaderorthoneeti.net/new/2016/11/13/41391/#.WDqd5bkRM2w
Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment