Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

আলজাজিরার ভিডিও নিয়ে তোলপাড় সাঁওতালদের ঘরে আগুন দেয় পুলিশ! বিষয়টি প্রমাণ হলে কঠোর ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষুখামারে ৬ নভেম্বর আখ কাটা নিয়ে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় তিন সাঁওতাল নিহত ও গুলিবিদ্ধ হন কয়েকজন। পাল্টা হামলায় আহত হন কয়েক পুলিশ সদস্যও।

পরে আইনশৃংখলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে। এ সময় তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। এসব বসতিতে পুলিশ সদস্যরাই আগুন দেন এমন অভিযোগ শুরু থেকেই করছে ক্ষুদ্র এ নৃগোষ্ঠী। ওই ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

প্রতিবেদনটি রোববার তারা ইউটিউবে আপলোড করে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছেন। এতে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান যুগান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। যেহেতু ইউটিউবে এ ধরনের ছবি দেয়া হয়েছে বলে আপনি বলছেন, অবশ্যই আমরা খতিয়ে দেখব।’

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ‘তদন্তে পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে অবশ্যই তা চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’

২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ফুটেজের প্রথম ৩৭ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা রাস্তা দিয়ে সাঁওতালদের বসতঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এরপর পোশাক পরিহিত এক পুলিশ সদস্যসহ তিনজন ঘরে আগুন দিচ্ছেন। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আরও অনেক সদস্য। এরপর আশপাশের আরও অনেক বাড়িঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

১ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দিজেন টুটু নামে এক সাঁওতাল সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছেন। এরপর বিস্তীর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। পরে আবদুল জলিল নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলেন।

আরেকটি সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ৩ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিও দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা সাঁওতালদের ঘরে লাথি মারছেন। এ সময় কয়েক সদস্য কুঁড়েঘরের খড় টেনে ছিঁড়ছেন।

৩৫ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, এক পুলিশ সদস্য একটি কুঁড়েঘরের খড়ে লাইটার জ্বেলে আগুন দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু লাইটার দিয়ে আগুন দিতে পুরোপুরি সফল না হওয়ায় তাকে সাহায্য করতে গোলাপি টি-শার্ট পরা আরেক ব্যক্তি এগিয়ে যান এবং পরে আগুন জ্বলে। পরে সাদা পোশাক পরা একজন গিয়ে আগুনটি ভালোভাবে ধরেছে কিনা তার তদারকি করেন। এরপর মুহূর্তেই পুরো ঘরে আগুন লেগে যায়। এরপর সেখান থেকে আগুন নিয়ে সাঁওতালদের অন্য ঘরেও আগুন দেন তারা।

১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, আগুন লাগানো ঘরগুলোর সামনে দিয়ে হাঁটছেন পুলিশ সদস্যরা। ১ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, অনেকগুলো ঘর আগুনে পুড়ছে, গবাদি পশুগুলো চিৎকার করে ছুটছে।

২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, সাঁওতালদের বসতিতে আগুন জ্বললেও তা নেভানোর চেষ্টা করছেন না কোনো পুলিশ সদস্য। ৩ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, দাউ দাউ করে পুড়ছে অনেকগুলো ঘর।

এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত সরকার বলেন, গোবিগঞ্জের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। সেদিন আগুন নেভোনোর জন্য দমকল বাহিনীকে খবর দেয়া হয়। কিন্তু তারা আসার আগেই সব পুড়ে যায়।

পুলিশ সদস্যরা আগুন দিয়েছেন এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন,  এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, পুলিশ ওই ঘটনার জন্য দায়ী। মামলা হলেও এখনও কেউ আটক হয়নি। বরং এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আটক করা হচ্ছে নিরীহ মানুষকে।

সংঘর্ষের ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানার এসআই কল্যাণ চক্রবর্তী ঘটনার দিন রাতেই ৩৮ জনের নামোল্লেখসহ সাড়ে ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ পর্যন্ত পুলিশ চার সাঁওতালকে গ্রেফতার করে। তারা এখন জামিনে মুক্ত।

অপরদিকে অগ্নিসংযোগ, লুট ও উচ্ছেদের ঘটনায় ১৬ নভেম্বর স্বপন মুরমু নামে একজন ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সাঁওতালদের পক্ষে মামলা করেন। এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সাঁওতালদের দাবি, তারা স্বপন নামে কাউকে চেনেন না।

২৬ নভেম্বর দুপুরে সাঁওতালদের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত থোমাস হেমরম স্থানীয় এমপি, ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩৩ জনের নামোল্লেখসহ অন্তত ৬০০ জনকে অজ্ঞাত পরিচয়ে থানায় এজাহার দাখিল করেন। এটি এখনও তদন্তাধীন।

সংঘর্ষের পর থেকেই সাঁওতাল পরিবারগুলোর কেউ কেউ খামারের পাশে সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর গির্জার সামনের মাঠে কলাগাছের পাতা দিয়ে খুপড়ি বানিয়ে, কেউ ত্রাণের তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকের ঠাঁই হয়েছে পরিত্যক্ত বিদ্যালয়ে।

http://www.jugantor.com/online/national/2016/12/12/33682/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%93%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%98%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A7%9F-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B6!
Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment