Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

গোবিন্দগঞ্জে পুলিশ-সাঁওতাল সংঘর্ষের এক বছর: ‘এত কিছুর পরও বিচার পাইলাম না’

[ এক বছর আগে ঘরবাড়ি, জমিজিরাত হারিয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে মাদারপুর গির্জার সামনে ছাপরা ঘর তুলে কোনো রকমে দিন গুজরান করছে সাঁওতালরা l ছবি: প্রথম আলো ]
‘বাপ-দাদার জমির জন্যে লড়াই করলাম। বাম চোখটা হারালাম, ডান চোখেও কম দেখি। শরীরের ক্ষত শুকায়নি। এখনো যন্ত্রণা করে। রোদে কাজ করতে পারি না। বেশি কথা বললে মাথা গরম হয়ে যায়।’ কথাগুলো বলতে বলতে চোখে পানি চলে এল জয়পুর গ্রামের দ্বিজেন টুডুর (৫২)। তবে তা সামলে নিয়েই বললেন, ‘এত কিছুর পরও আমরা বিচার পাইলাম না।’
পাশের মাদারপুর গ্রামের মিকাই মুরমুর (৪৮) মনের ক্ষত আজও দগদগে। বললেন, কখন আবার হামলা হয়, সেই শঙ্কায় থাকতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের গুচ্ছগ্রামে বসবাসের কথা বলা হয়েছিল। আমরা সেখানে যাব না। আমরা থাকার জায়গা চাই না। বাপ-দাদার জমি ফেরত চাই।’

কষ্ট ও আক্ষেপের এ কাহিনি শুধু দ্বিজেন টুডু ও মিকাই মুরমুর নয়। গত বছরের সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের জয়পুর ও মাদারপুর গ্রামের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সবার। গত বছরের ৬ নভেম্বর উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামারে আখ কাটা নিয়ে পুলিশ ও চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতাল নিহত হওয়ার পাশাপাশি অনেকে আহত হন। সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাটের পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই ঘটনার এক বছর পূর্তি হচ্ছে আজ।
সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামারটি সাঁওতাল–অধ্যুষিত জয়পুর ও মাদারপুর গ্রাম ঘেঁষে অবস্থিত। ১ নভেম্বর সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, খামারের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া। ভেতরে সবুজ আখ বাতাসে দুলছে। কাঁটাতারের পাশে সাঁওতালদের মাটির ঘর। চারদিকে শান্ত পরিবেশ। দেখে মনে হয় না, এখানেই ঘটেছিল সেই নারকীয় কাণ্ড।
জয়পুর গ্রামের টাডু টুডু (৬০) বলেন, ‘আমাদের তিনটে প্রাণ গেল। পুলিশ ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল। এক বছর চলে গেল, ভাগ্যে কিছু জুটল না। অর্ধাহার–অনাহারে দিন কাটাচ্ছি। জীবন দিয়েও আমরা জমি ফেরত পাইলাম না।’
সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার দান্দুপুর গ্রামের মঙ্গল মাড্ডি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ধনগইর গোমস্তাপুর গ্রামের শ্যামল হেমব্রম ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সিনটাজুরি গ্রামের রোমেশ সরেন। তাঁদের পরিবারগুলো আজ পর্যন্ত কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনেও নেই কোনো উদ্যোগ।
ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫০ জন সাঁওতালকে চাল-ডাল দেওয়া হয়। আর হাইকোর্টের নির্দেশে চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতালদের ঘরে ধান তুলে দেয়। তখন প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে প্রায় ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। বেসরকারিভাবে কিছু ত্রাণসামগ্রী আসে।
মামলার অগ্রগতি নেই
সংঘর্ষের ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। পুলিশ এখনো মামলার অভিযোগপত্রই জমা দেয়নি। সংঘর্ষের ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। পুলিশ বাদী হয়ে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে মামলা করে। এ মামলায় চার সাঁওতাল গ্রেপ্তার হলেও পরে তাঁরা জামিন পান। সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে একটি এবং থমাস হেমরম বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেন। হাইকোর্টের নির্দেশে এ মামলা দুটির তদন্তভার থানা-পুলিশের কাছ থেকে গাইবান্ধা পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) দেওয়া হয়।
তদন্তে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে গাইবান্ধা পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত এখনো চলছে। অভিযোগপত্র দিতে আরও সময় লাগবে।
চিহ্নিত দুই পুলিশ সদস্য কোথায়?
ভিডিও চিত্র দেখে সাঁওতালদের ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য শনাক্ত হন। তাঁদের মধ্যে গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের কনস্টেবল মাহবুবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের পর দিনাজপুরে এবং গাইবান্ধা রিজার্ভ ফোর্সের কনস্টেবল সাজ্জাদ হোসেনকে পঞ্চগড়ে বদলি করা হয়। এর বাইরে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুজনই এখন বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন।
মামলার তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় এবং দোষীদের শাস্তির মুখোমুখি না করায় সাঁওতালদের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না। সংগ্রাম কমিটির সহসভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, ‘আমাদের লোকজন এখনো বাজারে যেতে ভয় পাচ্ছে। বাজারে গেলেই অপরিচিত লোকজন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।’
তবে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই। সাঁওতাল এলাকায় ১২০ জন সশস্ত্র আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশের টহল চলছে।
কর্মসূচি
ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ সোমবার গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ ডাকা হয়েছে। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামার জমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ এবং গাইবান্ধার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনউদ্যোগ যৌথভাবে এ সমাবেশ ডেকেছে।
Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment