Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

সাঁওতাল হত্যা : এক বছরেও বিচার না পাওয়ার অভিযোগ

ফেরদৌস জুয়েল, গাইবান্ধা, ০৫ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:৫০
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রংপুর সুগার মিলের জমিতে বসতি স্থাপনকারী সাঁওতালদের উচ্ছেদ করা হয় এক বছর আগে। এ সময় সুগার মিল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও প্রভাবশালীদের লোকজন সাঁওতাল বসতিতে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালিয়ে লুটপাট করে বলে অভিযোগ উঠে। তিন সাঁওতালকে হত্যা করা হয়। কিন্তু ঘটনার এক বছর হতে চললেও মামলার কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। তাদের পুনর্বাসনেও নেই কোনো উদ্যোগ। তাই ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েই চলছে। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন তদন্তের বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গেই দেখছেন তারা।
১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার চিনিকলের জন্য গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকার সাঁওতাল সম্প্রদায় ও স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে এক হাজার ৮৪২ একর জমি আখ চাষের জন্য অধিগ্রহণ করে।
তখন থেকে এসব জমিতে উৎপাদিত আখ চিনিকলে সরবরাহ করা হচ্ছিল। কিন্তু সাঁওতালদের অভিযোগ, মিল কর্তৃপক্ষ ওইসব জমিতে দীর্ঘদিন আখ চাষ না করে বেআইনিভাবে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজনের কাছে লিজ দেয়। লিজ নেয়া ওইসব জমিতে তামাক, ধান, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়। এছাড়া এসব জমিতে অন্তত ১২টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালীরা।
এদিকে মিলের জমিতে আখ চাষ না হওয়ায় তিন বছর আগে বাপ-দাদার জমি ফেরত দেবার দাবিতে আন্দোলনে নামে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন।
মাদারপুর গ্রামের তেরেজা মুরমু আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আন্দোলনের একপর্যায়ে গেলো বছরের ১ জুলাই প্রায় ১০০ একর জমি দখলে নিয়ে আমরা একচালা ঘর নির্মাণ করি। আমাদের এই কাজে সহযোগিতা করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাকিল আহম্মেদ বুলবুল। তারা ভোটের আগে জমি উদ্ধারের কথা বলে আমাদের আন্দোলনে নামায়।
চেয়ারম্যান শাকিল আহম্মেদ বুলবুল সাঁওতালদের জমি উদ্ধার কমিটির সভাপতি হন। কমিটির নাম দেয়া হয় সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামার জমি উদ্ধার সংহতি কমিটি।
সাঁওতালদের অভিযোগ, জমি উদ্ধার সংহতি কমিটির সভাপতি শাকিল আহম্মেদ বুলবুল চিনিকলের জমি দখলের জন্য সাঁওতালদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। এই কাজে স্থানীয় সংসদ সদস্যও তাদের সহযোগিতা করেন। এজন্য সাঁওতালদের কাছ থেকে প্রচুর অর্থও নেয়া হয়।
কিন্তু ভোটের পর শাকিল আহম্মেদ ও সংসদ সদস্য আবুল কালাম চিনিকলের ব্যবস্থাপক আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে সমঝোতা করে। পরে গেলো বছরের ৬ নভেম্বর বসতি স্থাপনকারী সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে।
তাদের অভিযোগ, উচ্ছেদের সময় সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় মিল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজনের। এ সময় বসতি স্থাপনকারীদের ঘর-বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করা হয়। লুট করে নিয়ে যাওয়া হয় সাঁওতালদের গরু, ছাগল, ধান-চাল, ঘরের জিনিসপত্র।
পুলিশ ও সুগার মিল কর্তৃপক্ষ মিলে জ্বালিয়ে দেয় সাঁওতালদের শতশত ঘরবাড়ি। এ সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিন সাঁওতাল। পুলিশসহ আহত হন অনেকে। ফের ৭ নভেম্বর মাদারপুর ও জয়পুর গ্রামের সাঁওতালদের পুরাতন বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে পুড়ে ফেলা ঘরের ধ্বংসস্তুপ চিনিকলের ব্যবস্থাপক আব্দুল আউয়ালের নেতৃত্বে ট্রাক্টর দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশেয়ে দেয়া হয়। ফলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় অগ্নিসংযোগের আলমত।
এ ঘটনায় গেলো বছরের ১৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাকিল আহমেদ বুলবুলসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা করেন স্বপন মুরমু নামে এক সাঁওতাল। কিন্তু ঘটনার এক বছর হতে চললেও সে মামলার তদন্তে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। বর্তমানে উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালরা ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে   জয়পুর ও মাদারপুর গ্রামে বসবাস করছে।
এদিকে সাঁওতালদের ভূমি উদ্ধারে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত থাকলেও তাদের পুনর্বাসনে কোনো উদ্যোগ নেই। এতে ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে দিন কাটছে তাদের।
সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাস্কে আরটিভি অনলাইনকে বলেন, গেলো বছরের ৬ নভেম্বর ইউএনও আব্দুল হান্নান ও গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত সরকার সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই সাঁওতালদের উচ্ছেদে নামেন। এক্ষেত্রে তারা কোনো ধরনের নীতিমালা মানেননি।
রংপুর চিনিকল ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আওয়াল, সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ এবং সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাকিল আহমেদ বুলবুলের নেতৃত্বে সাঁওতালদের উচ্ছেদে তাদের নামানো হয়।
ফিলিমন বাস্কে সাঁওতাল উচ্ছেদের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সাঁওতাল উচ্ছেদের ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আদালতে তলব করা হয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও ও সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্তের জন্য পাঠানো হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই)। এই মামলায় পিবিআই এ পর্যন্ত তিনজনকে আলামতসহ গ্রেপ্তার করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন মিয়া দাবি করেন, জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব থাকলেও মামলার তদন্তে আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই।
 উৎস: http://www.rtvonline.com/country/25546/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%93%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE--%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%AC%E0%A6%9B%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%93-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97

Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment