স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে আগুন লাগানোর ঘটনায় এক
পুলিশ সদস্য ও দুইজন (ডিবি) গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যসহ মোট তিনজন জড়িত
উল্লেখ করে সুপ্রীমকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনের বিষয়ে মঙ্গলবার শুনানি
অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য
দিন ঠিক করেছেন আদালত। জীবন বাঁচানোর তাগিদে ওষুধ প্রস্তুতকারী ২০টি
কোম্পানির ওষুধ নিয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ। এ বিষয়ে রায়
ঘোষণার জন্য আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাত
খুন মামলার অন্যতম আসামি র্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত অধিনায়ক তারেক সাঈদ ও
পুলিশের এসআই পুর্ণেন্দ্র বালা খালাস চেয়ে আপীল করেছেন হাইকোর্টে। রেন্ট এ
কারের চালক খুনের মামলায় চার আসামির ফাঁসি বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। আদালত
বলেছে, অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে এদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর কোন সুযোগ
নেই। মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চগুলো এ আদেশ প্রদান করেছেন।
গাইবান্ধার
সাঁওতাল পল্লীতে আগুন লাগানোর ঘটনায় প্রতিবেদন মঙ্গলবার শুনানি অনুষ্ঠিত
হয়েছে। আদেশের জন্য ৭ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি ওবায়দুল
হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই
আদেশ দেন। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সংশ্লিষ্ট পক্ষে ও বিপক্ষের সকলকে
আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদনের কপি দেয়ার জন্যও বলা হয়েছে।
আদালতে
মঙ্গলবার সাঁওতালদের পক্ষে ছিলেন- এএম আমিন উদ্দিন ও সামিউল আলম সরকার।
অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। এর আগে
রবিবার সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দাখিল করার পর সোমবার
এফিডেভিট আকারে হাইকোর্টে এই প্রতিবেদন দাখিল করেন গাইবান্ধার চিফ
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শহিদুল্লাহ। প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা
হয়েছে, সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন লাগানোর ঘটনার জন্য স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি
এবং ঘটনার সময়ে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য দায়ী।
এই আগুন লাগানোর ঘটনার সঙ্গে এক জন পুলিশ সদস্য ও দুই জন ডিবি (গোয়েন্দা
পুলিশ) সদস্য সক্রিয়ভাবে জড়িত।
এর আগে গত বছরের
১৪ ডিসেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেয়ার ঘটনায়
পুলিশ জড়িত কিনা সে বিষয়ে তদন্তের জন্য জেলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেকে
নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে
বলা হয়। পাশাপাশি সাঁওতাল পল্লীতে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহার
দুটি সমান গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করতে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজিকে
নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময়
বড়ুয়া, এ্যাডভোকেট সামিউল আলম সরকার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি
জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
তারেক সাঈদ ও এসআই বালার খালাস চেয়ে আপীল
মুখ্য বিচারিক
হাকিমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেদিন দুইজন পুলিশ সদস্য ও একজন ডিবি সদস্য
যখন আগুন দিচ্ছিলেন, আরও কিছু পুলিশ সদস্য কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন যারা
আগুন লাগানোয় সক্রিয় অংশগ্রহণ না করলেও তা নেভানোর চেষ্টা করেননি। আর যারা
আগুন দিচ্ছিলেন তাদের মাথায় হেলমেট থাকায় এবং অনেক দূর থেকে ঘটনাটি ভিডিও
করায় ওই পুলিশ সদস্যদের চেহারা শনাক্ত করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। অন্যদিকে
ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ‘ওই দিন ঘটনাস্থল
এলাকায় যারা দায়িত্বরত ছিলেন তাদের তালিকা পুলিশ সুপারের কাছে কমিটির পক্ষ
থেকে চাওয়া হয়েছিল। ওই ঘটনায় আরেকটি তদন্ত যেহেতু কাজ করছিল, ওই তালিকা
সেখানে সরবরাহের কারণে এখানে তা করতে পারেনি।’
১৯৬২
সালে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতাল ও বাঙালীদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার
৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার
গড়ে তুলেছিল। ওই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের
চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে তার দখল ফিরে পেতে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। পরে
সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে বিরোধপূর্ণ চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে
কয়েকশ’ ঘর তুলে বসবাস শুরু করে তারা। গত ৬ নবেম্ব^র চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি
উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। ওই ঘটনায় নিহত হন তিন সাঁওতাল, আহত
হন অনেকে। সংঘর্ষের পর গোবিন্দগঞ্জ থানার এসআই কল্যাণ চক্রবর্তী ৩৮ জনের
নাম উল্লেখ করে সাড়ে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় চার সাঁওতালকে
গ্রেফতার করার পর তারা জামিনে মুক্তি পান। অন্যদিকে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুট
ও উচ্ছেদের ঘটনায় মুয়ালীপাড়া গ্রামের সমেস মুরমুর ছেলে স্বপন মুরমু গত ১৬
নবেম্বর অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন; তার মামলায় ২১ জনকে
গ্রেফতার করে পুলিশ।দশদিন পর গত ২৬ নবেম্বর সাঁওতালদের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত
টমাস হেমব্রম বাদী হয়ে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০০-৬০০ জনের বিরুদ্ধে
আরেকটি অভিযোগ দাখিল করেন। এছাড়া হাইকোর্টে দুটি রিট আবেদন হয়।
আইনজীবী
সামিউল আলম সরকার জানান, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাঁওতাল পল্লীতে
আগুন দেয়ার ঘটনার ভিডিও প্রকাশিত হয়। এটা নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্রেও
লেখালেখি হয়। সেই ভিডিও ফুটেজ আদালতে দাখিল করলে উপরোক্ত আদেশ আসে। এর আগে
সাঁওতাদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা পৃথক রিটের শুনানি নিয়ে সাঁওতালদের
স্বাধীনভাবে চলাফেরা নিশ্চিত করতে ও ধান কাটার সুযোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া
হয়। প্রসঙ্গ, ৬ নবেম্বর গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে
কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ
হয়। এতে তিন সাঁওতালের মৃত্যু হয়। পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়।
২০
কোম্পানির ওষুধ ॥ জীবন বাঁচানোর তাগিদে ওষুধ প্রস্তুতকারী ২০টি কোম্পানির
ওষুধ নিয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ। এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য
আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। ওইদিন জানা যাবে এই ২০
কোম্পানিতে ওষুধ উৎপাদন হবে কি না। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার
হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোঃ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান
খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে আদেশ দেন। পরে আইনজীবী
এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সাঈদ
তারেকের আপীল ॥ নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার অন্যতম আসামি র্যাব-১১-এর
চাকরিচ্যুত অধিনায়ক তারেক সাঈদ ও পুলিশের এসআই পুর্ণেন্দ্র বালা খালাস চেয়ে
আপীল করেছেন হাইকোর্টে। সোমবার সন্ধ্যায় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই
আপীল করা হয় বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন তারেকের আইনজীবী আহসান উল্লাহ।
এর আগে সোমবার দুপুরে খালাস চেয়ে আপীল করেন এ মামলার প্রধান আসামি নূর
হোসেন।
চারজনের মৃত্যুদ- বহাল ॥ রেন্ট এ কারের
চালক খুনের মামলায় চার আসামির ফাঁসি বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে,
অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে এদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর কোন সুযোগ নেই।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহীদুল করিমের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার
এই রায় দেয়। রায়ে আসামি তৈয়ব আলম, আনোয়ার হোসেন, আহমদ শরীফ ও শাহীন ওরফে
গড্ডুর ফাঁসির রায় বহাল রাখে হাইকোর্ট। তবে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আরেক আসামি
বিল্লাল হোসেন ওরফে সুমনকে খালস দেয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি এ্যাটর্নি
জেনারেল ফরহাদ আহমেদ ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোরশেদ
শুনানি করেন। আসামিপক্ষে ছিলেন এস এম মুক্তার কবির খান।
0 comments:
Post a Comment