০১:০০, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৭
| প্রিন্ট সংস্করণ
|
আপডেট:
একটি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম একটি বর্ণিল প্রাচীরপত্রে
লেখা: Love Bangla, use English. শ্রেণিকক্ষের সামনে দেয়ালে লেখা We shall
communicate in English. কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি
হতেই পারে। সেটি মনে করিয়ে দেওয়ার মধ্যেও আপত্তির কিছু দেখছি না। শুধু যে
ইংরেজি ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে তা-ই নয়, বাংলাকে ভালোবাসতেও উৎসাহিত করা
হচ্ছে।
তবে বাংলা ভাষাকে ভালোবাসলেই যে তার সঠিক ব্যবহার করতে পারব—এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই| বাংলায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোই তার উদাহরণ। ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের উল্লেখ করে লেখা হতে পারে: ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য তারা (তাঁরা নয়) জীবন দিয়েছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রায়ই ক্যামব্রিজ লেখা হয়। অর্থনীতির সংবাদে লেখা হয়: প্রথম প্রান্তিকে প্রবাসী আয় কমেছে। ইংরেজি quarter বা চতুর্থাংশের বাংলা হিসেবে প্রান্তিক শব্দটির ব্যবহার এখন প্রচলিত এবং তা নিয়ে কাউকে কোনো প্রশ্ন করতে শুনিনি। অথচ এই দুটি শব্দ সমার্থক, এ কথা কি কেউ বলতে পারবে?
ইংরেজি রেমিট্যান্স শব্দটি বাংলায় লেখা হয় অথবা তার বদলে প্রবাসী আয় শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয়। প্রবাসীর পুরো আয়ই রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠানো হয় কি? আসলে আমরা বলতে চাই প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। হয়তোবা কোনো একসময় রেমিট্যান্স শব্দটিই বাংলা অভিধানে ঢুকে যাবে, যেমনটা হয়েছে চেয়ার, টেবিল এসব শব্দের বেলায়। আর এভাবেই একটি ভাষার বিকাশ ঘটে এবং তার ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়। তবে আমার বইয়ের সম্পাদক যখন বলেন, ভাষার ব্যাপারে সতীত্বের প্রয়োজন নেই (যার অর্থ, কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে আপত্তি থাকা উচিত নয়), তখন আমি শঙ্কিত না হয়ে পারি না।
কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলাম একজন শিক্ষক-বন্ধুর আমন্ত্রণে। প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছি বাংলায় বক্তৃতা দেওয়ার জন্য, অথবা আংশিকভাবে হলেও বিষয়গুলো বাংলায় ব্যাখ্যা করার জন্য। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের মতামত নিয়ে দেখা গেল যে কেউ বাংলায় প্রশ্নোত্তর লেখার পরিকল্পনা করছে না এবং বাংলায় বক্তৃতার বিশেষ কোনো চাহিদা নেই। অথচ সত্তরের দশকে, যখন আমি সেখানে শিক্ষক ছিলাম, চিত্রটি ছিল ভিন্ন। অনেক ছাত্রছাত্রী বাংলায় প্রশ্নপত্রের উত্তর দিত এবং শিক্ষকেরাও তাঁদের বক্তৃতায় বাংলা ভাষা ব্যবহার করতেন।
কেন এই বিপরীতমুখী প্রবণতা? একুশের চেতনা কি তাহলে ফিকে হয়ে গেছে?
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বাঙালি বুকের রক্ত দিয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে উন্মেষ ঘটেছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের, শুরু হয়েছিল স্বাধীনতাসংগ্রামের। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা ভাষার যথাযোগ্য মর্যাদা এবং স্থান নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কিন্তু ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জনে, অর্থাৎ রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা কতটা সফল হয়েছি? এ বিষয়ে আমাদের যে কোনো সাফল্য নেই, তা নয়। তবে আমাদের অর্জন কি সন্তুষ্ট হওয়ার মতো? স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র অর্জনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অর্জন করেছি। তা সত্ত্বেও বাংলা ভাষার ব্যবহারকে সর্বজনীন করা এবং ভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমাদের অগ্রগতি কতটা, এ নিয়ে প্রশ্ন করা যায়।
শিক্ষার দিকটিই দেখা যাক। উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহারের প্রধান বাধা হচ্ছে প্রয়োজনীয় পাঠ্যবই ও সহায়ক পুস্তকের স্বল্পতা। সেটা কাটিয়ে ওঠার জন্য এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করা দরকার ছিল শিক্ষক সম্প্রদায়ের। তার সঙ্গে প্রয়োজন ছিল বিভিন্ন বিষয়ে পরিভাষা প্রণয়নে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে উদ্যোগ। এ বিষয়ে স্বাধীনতা-উত্তরকালে যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, তা নয়। কিন্তু সেখানে প্রয়োজন ছিল ধারাবাহিকতা এবং প্রাথমিক কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেখানেই আমাদের ব্যর্থতা। আর তার ফলে কী হয়েছে? যাঁরা বাংলা ভাষায় লিখছেন, তাঁরাও অনেক সময় ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে সৃষ্টি করছেন একটি সংকর ভাষা। তা ছাড়া, নিজেরা বাংলা প্রতিশব্দ সৃষ্টি করতে গিয়ে জন্ম দিচ্ছেন ভুল প্রতিশব্দের। আর একবার কোনো প্রতিশব্দ চালু হয়ে গেলে সেটি ভুল কি শুদ্ধ, তা-ও বিচার করা হচ্ছে না। এই লেখার শুরুতেই সংবাদপত্রের ভাষা থেকে যে উদাহরণগুলো দিয়েছি, তা থেকে পাঠক নিশ্চয় কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন, আমি কী বলতে চাইছি।
শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক ও সংবাদপত্রের মতো আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রগুলোতে বাংলার ব্যবহারের যা অবস্থা তা থেকে অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রগুলোতে কী হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ঢাকা শহরের দোকানপাটে বাংলাতেই প্রায় সব নামফলক (সাইনবোর্ড) টাঙানো থাকত। সময়ের সঙ্গে সে ক্ষেত্রে পরিবর্তন হয়েছে অনেক; বাংলাকে সরিয়ে এসেছে ইংরেজি, বিশেষ করে শহরের অভিজাত অঞ্চলগুলোতে। আর বাংলায় লিখলেও অনেকগুলোতে দেখা যায় ভুলের ছড়াছড়ি, যা কখনো কখনো হাস্যকর বা আপত্তিকর পর্যায়েও চলে যেতে পারে। বাংলা আমার মাতৃভাষা। সুতরাং আমি ভাবি, বাংলা লেখায় আমার ভুল হবে কেন! ভাষায় দক্ষতা আছে এমন কাউকে লেখাটি দেখিয়ে নিলেই যে ভুল এড়ানো যেতে পারে, সে কথাও আমাদের অনেকের মনে হয় না।
এই লেখায় যে অবস্থা বর্ণনা করা হলো তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? প্রথমত, সকল পর্যায়ে চাই আমার ভাষার প্রতি ভালোবাসা এবং অঙ্গীকার। আর সেটা শুধু ফেব্রুয়ারিতে নয়, সব সময়ই। দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রয়োজন আরও সক্রিয়তা। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ করব বিভিন্ন বিষয়ে পরিভাষা নির্মাণের জন্য আরও কাজ করা। সে কাজ করতে হবে যত্ন ও নিষ্ঠার সঙ্গে, সম্পৃক্ত করতে হবে শুধু ভাষাজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের নয়, প্রাসঙ্গিক বিষয়ের পণ্ডিতদেরও। তৃতীয়ত, জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে ভাষা শিক্ষায় শিক্ষকদের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ব্যবহারিক জীবনে তেমনি সংবাদপত্রগুলো ভাষা সঠিকভাবে ব্যবহারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সকল পর্যায়ে প্রয়োজন সদিচ্ছা, সচেতনতা এবং সক্রিয় উদ্যোগ।
রিজওয়ানুল ইসলাম: অর্থনীতিবিদ, ছড়াকার ও গল্পকার।
তবে বাংলা ভাষাকে ভালোবাসলেই যে তার সঠিক ব্যবহার করতে পারব—এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই| বাংলায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোই তার উদাহরণ। ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের উল্লেখ করে লেখা হতে পারে: ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য তারা (তাঁরা নয়) জীবন দিয়েছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রায়ই ক্যামব্রিজ লেখা হয়। অর্থনীতির সংবাদে লেখা হয়: প্রথম প্রান্তিকে প্রবাসী আয় কমেছে। ইংরেজি quarter বা চতুর্থাংশের বাংলা হিসেবে প্রান্তিক শব্দটির ব্যবহার এখন প্রচলিত এবং তা নিয়ে কাউকে কোনো প্রশ্ন করতে শুনিনি। অথচ এই দুটি শব্দ সমার্থক, এ কথা কি কেউ বলতে পারবে?
ইংরেজি রেমিট্যান্স শব্দটি বাংলায় লেখা হয় অথবা তার বদলে প্রবাসী আয় শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয়। প্রবাসীর পুরো আয়ই রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠানো হয় কি? আসলে আমরা বলতে চাই প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। হয়তোবা কোনো একসময় রেমিট্যান্স শব্দটিই বাংলা অভিধানে ঢুকে যাবে, যেমনটা হয়েছে চেয়ার, টেবিল এসব শব্দের বেলায়। আর এভাবেই একটি ভাষার বিকাশ ঘটে এবং তার ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়। তবে আমার বইয়ের সম্পাদক যখন বলেন, ভাষার ব্যাপারে সতীত্বের প্রয়োজন নেই (যার অর্থ, কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে আপত্তি থাকা উচিত নয়), তখন আমি শঙ্কিত না হয়ে পারি না।
কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলাম একজন শিক্ষক-বন্ধুর আমন্ত্রণে। প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছি বাংলায় বক্তৃতা দেওয়ার জন্য, অথবা আংশিকভাবে হলেও বিষয়গুলো বাংলায় ব্যাখ্যা করার জন্য। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের মতামত নিয়ে দেখা গেল যে কেউ বাংলায় প্রশ্নোত্তর লেখার পরিকল্পনা করছে না এবং বাংলায় বক্তৃতার বিশেষ কোনো চাহিদা নেই। অথচ সত্তরের দশকে, যখন আমি সেখানে শিক্ষক ছিলাম, চিত্রটি ছিল ভিন্ন। অনেক ছাত্রছাত্রী বাংলায় প্রশ্নপত্রের উত্তর দিত এবং শিক্ষকেরাও তাঁদের বক্তৃতায় বাংলা ভাষা ব্যবহার করতেন।
কেন এই বিপরীতমুখী প্রবণতা? একুশের চেতনা কি তাহলে ফিকে হয়ে গেছে?
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বাঙালি বুকের রক্ত দিয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে উন্মেষ ঘটেছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের, শুরু হয়েছিল স্বাধীনতাসংগ্রামের। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা ভাষার যথাযোগ্য মর্যাদা এবং স্থান নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কিন্তু ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জনে, অর্থাৎ রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা কতটা সফল হয়েছি? এ বিষয়ে আমাদের যে কোনো সাফল্য নেই, তা নয়। তবে আমাদের অর্জন কি সন্তুষ্ট হওয়ার মতো? স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র অর্জনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অর্জন করেছি। তা সত্ত্বেও বাংলা ভাষার ব্যবহারকে সর্বজনীন করা এবং ভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমাদের অগ্রগতি কতটা, এ নিয়ে প্রশ্ন করা যায়।
শিক্ষার দিকটিই দেখা যাক। উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহারের প্রধান বাধা হচ্ছে প্রয়োজনীয় পাঠ্যবই ও সহায়ক পুস্তকের স্বল্পতা। সেটা কাটিয়ে ওঠার জন্য এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করা দরকার ছিল শিক্ষক সম্প্রদায়ের। তার সঙ্গে প্রয়োজন ছিল বিভিন্ন বিষয়ে পরিভাষা প্রণয়নে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে উদ্যোগ। এ বিষয়ে স্বাধীনতা-উত্তরকালে যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, তা নয়। কিন্তু সেখানে প্রয়োজন ছিল ধারাবাহিকতা এবং প্রাথমিক কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেখানেই আমাদের ব্যর্থতা। আর তার ফলে কী হয়েছে? যাঁরা বাংলা ভাষায় লিখছেন, তাঁরাও অনেক সময় ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে সৃষ্টি করছেন একটি সংকর ভাষা। তা ছাড়া, নিজেরা বাংলা প্রতিশব্দ সৃষ্টি করতে গিয়ে জন্ম দিচ্ছেন ভুল প্রতিশব্দের। আর একবার কোনো প্রতিশব্দ চালু হয়ে গেলে সেটি ভুল কি শুদ্ধ, তা-ও বিচার করা হচ্ছে না। এই লেখার শুরুতেই সংবাদপত্রের ভাষা থেকে যে উদাহরণগুলো দিয়েছি, তা থেকে পাঠক নিশ্চয় কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন, আমি কী বলতে চাইছি।
শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক ও সংবাদপত্রের মতো আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রগুলোতে বাংলার ব্যবহারের যা অবস্থা তা থেকে অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রগুলোতে কী হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ঢাকা শহরের দোকানপাটে বাংলাতেই প্রায় সব নামফলক (সাইনবোর্ড) টাঙানো থাকত। সময়ের সঙ্গে সে ক্ষেত্রে পরিবর্তন হয়েছে অনেক; বাংলাকে সরিয়ে এসেছে ইংরেজি, বিশেষ করে শহরের অভিজাত অঞ্চলগুলোতে। আর বাংলায় লিখলেও অনেকগুলোতে দেখা যায় ভুলের ছড়াছড়ি, যা কখনো কখনো হাস্যকর বা আপত্তিকর পর্যায়েও চলে যেতে পারে। বাংলা আমার মাতৃভাষা। সুতরাং আমি ভাবি, বাংলা লেখায় আমার ভুল হবে কেন! ভাষায় দক্ষতা আছে এমন কাউকে লেখাটি দেখিয়ে নিলেই যে ভুল এড়ানো যেতে পারে, সে কথাও আমাদের অনেকের মনে হয় না।
এই লেখায় যে অবস্থা বর্ণনা করা হলো তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? প্রথমত, সকল পর্যায়ে চাই আমার ভাষার প্রতি ভালোবাসা এবং অঙ্গীকার। আর সেটা শুধু ফেব্রুয়ারিতে নয়, সব সময়ই। দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রয়োজন আরও সক্রিয়তা। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ করব বিভিন্ন বিষয়ে পরিভাষা নির্মাণের জন্য আরও কাজ করা। সে কাজ করতে হবে যত্ন ও নিষ্ঠার সঙ্গে, সম্পৃক্ত করতে হবে শুধু ভাষাজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের নয়, প্রাসঙ্গিক বিষয়ের পণ্ডিতদেরও। তৃতীয়ত, জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে ভাষা শিক্ষায় শিক্ষকদের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ব্যবহারিক জীবনে তেমনি সংবাদপত্রগুলো ভাষা সঠিকভাবে ব্যবহারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সকল পর্যায়ে প্রয়োজন সদিচ্ছা, সচেতনতা এবং সক্রিয় উদ্যোগ।
রিজওয়ানুল ইসলাম: অর্থনীতিবিদ, ছড়াকার ও গল্পকার।
0 comments:
Post a Comment