Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

সাঁওতালদের আর্তচিৎকারের বছর

প্রীতম সাহা সুদীপ, ঢাকা: কালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরো একটি বছর। অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উৎরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী ছিল বিদায়ী বছর (২০১৬)। বছরটিতে বেশ আলোচনায় ছিল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে উচ্ছেদ অভিযান।
ঘটনার সূত্রপাত ৬ নভেম্বর। সেদিন সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা বিরোধপূর্ণ জমি থেকে কয়েকশ ঘর সাঁওতালকে উচ্ছেদের অভিযান চালানো হয়। সে সময় সংঘর্ষ বাঁধে এবং সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট, ভাংচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশও গুলি চালায়। এ সময় নিহত হন তিন সাঁওতাল, আহত হন কমপক্ষে ৩০ জন। পুলিশ ও সাঁওতালদের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে মামলা হয়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উপর গুলিবর্ষণের ওই ঘটনায় সমালোচনা হয় দেশজুড়ে।
      [সাঁওতালদের ঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে]
ঘটনার প্রায় এক মাস পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাঁওতাল পল্লীর ভেতরে পুলিশ সদস্যরা গুলি ছুড়ছেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্য একটি ঘরে লাথি মারেন এবং পরে এক পুলিশ সদস্য ওই ঘরে আগুন দেন। পুলিশের সঙ্গে সাধারণ পোশাকে থাকা আরেকজন আগুন অন‌্য ঘরে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেন। ভিডিওর একটি অংশে আরো কয়েকটি ঘরে আগুন দিতে দেখা যায় পুলিশ সদস‌্যদের। তাদের মাথায় ছিল হেলমেট, একজনের পোশাকের পেছনে ডিবি, আরেকজনের পুলিশ লেখা ছিল।
সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস করে আসছিল কয়েক বছর ধরে। চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওই জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। একচালা ঘরগুলো পুড়িয়ে দেয়ার পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি সমান করে দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাংসদ ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সূত্র জানায়, চিনিকলের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ মেটাতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাংসদ আবুল কালাম আজাদ ও ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আলম ‍বুলবুল সহযোগিতায় সাঁওতালরা চার বছর আগে আন্দোলন শুরু করেন।

কিন্তু ঘটনার দিন সাংসদ ও চেয়ারম্যান মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সহিংস ঘটনায় ইন্ধন দেন। তারা ঘটনাস্থলেও উপস্থিত ছিলেন। হামলায় প্রত্যক্ষ নাম উঠে এসেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল আলম বুলবুলের, যিনি সাংসদ আজাদের স্নেহধন্য। তার নেতৃত্বেই সাঁওতাল পল্লীতে সেদিন ৬শ’ ঘর ও স্কুলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সে দিনের ওই ঘটনায় আহত হন দ্বিজেন টুডু। তার বাম চোখটি নষ্ট হয়ে যায়, সারা শরীরে ছররা গুলি লাগে। চিকিৎসার জন্য তাকে পুলিশি পাহারায় আনা হয় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে। সেখানে নিউজনেক্সটবিডি ডটকমের সাথে তার কথা হয়।
কি ঘটেছিল জানতে চাইলে দ্বিজেন বলেন, “সেদিন (৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় মাদারপুরের চারটি গ্রামের সাঁওতালদের ওপর অতর্কিত হামলা হয়। এ সময় গ্রামবাসীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকে। অনেকেই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি না পালিয়ে খালি হাতে হামলাকারীদের দিকে এগিয়ে যাই। কিছু দূর যাওয়ার পরই বৃষ্টির মতো গুলি এসে আমার শরীরে লাগে। মাথায় আর দুই চোখে গুলি লাগার পর আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।”
     [আহত দ্বিজেন টুডু]
তিনি বলেন, “অচেতন অবস্থায় এক সাঁওতাল কিশোর এসে আমাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় আমাকে প্রথমে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, পরে পার্বতীপুরে নেয়া হয়। শেষে রাত ১০টার দিকে নেয়া হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পুলিশ এসে আমাকে গ্রেফতার করে। এরপর তিনজন পুলিশকে দিয়ে আমাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ওরা আমাদের মারলো, গুলি করলো, ঘর-বাড়ি আগুনে পোড়ালো আবার মামলার আসামিও আমাদেরই করলো।”
ওই ঘটনার জন্য কাদের দায়ি করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে টুডু বলেন, “সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুল আমাদের জমি উদ্ধারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। বড় আশা করে তাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান বানিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বাপ দাদার জমি ফেরত পাবো। গোবিন্দগঞ্জের এমপি আবুল কালাম আজাদ ও চেয়ারম্যান বুলবুলের কথায়ই আমরা জমি উদ্ধারের আন্দোলনে নেমেছিলাম, ঢাকায় গিয়ে মানববন্ধনও করেছিলাম। আন্দোলনে নামিয়ে তারাই এখন আমাদের মারলো। ৬ নভেম্বর বাগদা ফার্মের পাশে কাটার মোড় এলাকায় চিনিকলের সামনে অবস্থান নিলে চিনিকলের এমডি এসে আমাদের আশ্বস্ত করেন। পরে আমরা চলে আসার সময় পেছন থেকে হঠাৎ হামলা চালানো হয়।”
সম্পাদনা: প্রণব
Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

1 comments: