Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

ভূমিতে ১২৫ বছরের অধিকার হারাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ

মেহেদী আল আমিন | ২০১৫-১২-০৭ ইং
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় পুরাতন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয় পাশ নিয়ে চান্দপুর চা বাগান। ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন এ বাগানে জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৯৫১ একর। এর মধ্যে চাষাবাদের জমি রয়েছে ৯৮৫ একর। এ জমি থেকেই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ৫১২ একর অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অনুকূলে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে ওই জমির ওপর থেকে অধিকার হারাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রায় নয় হাজার মানুষ।

দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন চান্দপুর চা বাগানেও একটি অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ২৬ আগস্ট অকৃষি খাসজমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত মামলার মাধ্যমে চা বাগানটির ৫১১ দশমিক ৮৩ একর ভূমি বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানের কাছে বন্দোবস্তের প্রস্তাব অনুমোদন করে ভূমি মন্ত্রণালয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর ১/১ খতিয়ানে রেকর্ড সংশোধনের পর গত ২১ নভেম্বর জমিটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য হস্তান্তর করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হস্তান্তর করা ওই জমিজুড়ে ধানক্ষেত। কোথাও কোথাও ধান কাটা চলছে। ধান কাটা শেষ করে বিভিন্ন সবজির চারাও বুনছেন কেউ কেউ। এ জমিতে বছরে দুটি ফসল হয়।
এ জমিতেই ৩৬ শতকে ধানের আবাদ করেছেন চা বাগানের শ্রমিক যতীন্দ্র রাজবংশী। প্রতিষ্ঠার পর ১৮৯০ সাল থেকেই এ বাগানে বাস করে আসছেন যতীন্দ্রর পূর্বপূরুষরা। ১২৫ বছরের দখল তাই ছাড়তে চান না তিনি। যতীন্দ্র বলেন, ‘আমার দাদা ছিল, বাবা ছিল, আমিও আছি এ বাগানে। আমাদের জমি কে নিব। আমরা জমি দিতাম না।’
চা শ্রমিক বাবার চাষাবাদ করা জমি চার ভাইয়ের মধ্যে ভাগ হয়ে গেলে সাড়ে ১২ শতাংশ পেয়েছেন ভবতারণ রাজবংশী। তিনি বলেন, বাগানে যারা কাজ করে, তারা জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। বাকিরা কী করবে। আমি নিজের জমিতে ধান চাষ করি। অন্য সময় অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। কিছুতেই আমরা আমাদের চাষের জমি দেব না।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এ বাগানে শ্রমিক রয়েছেন মোট ১ হাজার ৯৫৫ জন। এর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক ১ হাজার ৬৫৫ ও অস্থায়ী ৩০০। শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যসহ বাগানে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা ৮ হাজার ৮৩৩। এর মধ্যে যারা বাগানে কাজ করেন, তারাই কেবল দৈনিক ৮৫ টাকা হারে মজুরি পান। বাকিদের যাদের কাজ নেই, তারা এ জমির ওপর নির্ভরশীল। বংশপরম্পরায় তারা এসব জমি চাষাবাদ করে আসছেন।
এ বাগানে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে রাজবংশী ছাড়াও রয়েছে সাঁওতাল, মাঝি, রবিদাশ, বুনার্জি, শীল, বাউরি, মাল, কড়া, কানো, পাত্র, ওরাওঁ, ভূমিজ, কালিন্দি প্রভৃতি।
এসব নৃ-গোষ্ঠীর মানুষজন এত দিন চা বাগানের জমিতে অবৈধভাবে চাষাবাদ করে আসছিল বলে মন্তব্য করেন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘সরকারের জমি ফাঁকা পড়ে ছিল। তারা সেখানে অবৈধভাবে চাষাবাদ করেছে। তার পরও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
শ্রমিকদের উচ্ছেদের আগে এর সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন বলে           জানান ডানকান ব্রাদার্সের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে            তিনি বলেন, আপত্তি জানিয়ে সরকারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী জমি নিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে জমি নিলে যে মানুষগুলো কর্ম হারাবে, তার প্রভাব পড়বে এ বাগান ও আশপাশের বাগানের ওপর। বেকারত্বের কারণে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন।
জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, দীর্ঘদিনের দাসত্বের জীবন থেকে চা শ্রমিকদের আমরা বের করে আনব। ক্ষতিপূরণ নয়, আমরা তাদের জীবনটাই বদলে দেয়ার চেষ্টা করছি। এখানে প্রতিটি পরিবারে চাকরির বাধ্যবাধকতা দিয়ে দেব। সেখানে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও ট্রেনিং সেন্টার হবে। শ্রমিকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে ওখানেই কাজ করার সুযোগ পাবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজনের কাজের ব্যবস্থা করেছি। বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপকে বলেছি কাজ দেয়ার জন্য। অনেকে তাতে রাজিও হয়েছে।
তার পরও জমি রক্ষার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ শ্রমিক ইউনিয়ন, চা শ্রমিকদের ভূমি রক্ষা কমিটিসহ আরো কিছু সংগঠন। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি বলেন, জঙ্গল কেটে এ কৃষিজমি তৈরি করেছে আমাদের পূর্বপুরুষরা। তাই এ জমির ওপর অধিকার আমাদেরই। সে অধিকার কেড়ে নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে তা হবে খারাপ নজির। ক্ষতিপূরণ ও চাকরির কথা বলা হলেও এ ধরনের লিখিত কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি।
জানা যায়, প্রায় ১৫০ বছর আগে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ এনে জঙ্গল পরিষ্কার করে চা বাগান তৈরি করে ফিনলে, ডানকান ব্রাদার্সসহ আরো কয়েকটি কোম্পানি। পরে যেসব জমিতে চা গাছ লাগানো সম্ভব হয়নি, সেগুলো শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয় চাষাবাদের জন্য।
Source: http://www.bonikbarta.com/news/details/58556.html
Share on Google Plus

About Santali Pạrsi

0 comments:

Post a Comment